পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৭
অথৈজল

 —সে কি হয় ডাক্তারবাবু? তবে পান্নাকে বাদ দেওয়া যাক, কি বল প্রেসিডেণ্ট সাহেব?

 প্রেসিডেণ্ট আবদুল হামিদ (নসরাপুর ইউনিয়ন বোর্ডের) একগাল অমায়িক হাসি হেসে বললে—নাঃ, ও পান্না টান্নাকে বাদ দিতে পারি, কিন্তু ডাক্তারবাবুকে—কক্ষনো না।

 আমি কৃতার্থ হই। যথারীতি ওদের স্থূলরুচি অনুযায়ী বনভোজন সম্পন্ন হোল। সন্ধ্যার আগে ওরা তাড়াতাড়ি ফিরলো আসরে যাবে বলে। আমি গেলুম ওদের সঙ্গে। সেই রাত্রে পান্না আবার আমার ডাক্তারখানায় এসে হাজির। আমি জানতাম ও ঠিক আসবে, মনে মনে ওর প্রতীক্ষা করিনি এ কথা বললে মিথ্যে কথা বলা হবে। আমার সমস্ত মনপ্রাণ ওর উপস্থিতি কামনা করেনি কি?

 ও এসেই হাসিমুখে সহজ সুরে বললে—আসরে যাওয়া হয়নি যে বড়?

 অদ্ভুতভাবে দুষ্টু মেয়ের মত চোখ নাচিয়ে ও প্রশ্নটা করলে। এখন যেন ও আমাকে আর সমীহ করে না। আমার খুব কাছে যেন এসে গিয়েচে ও। যেন কতদিনের বন্ধুত্ব ওর সঙ্গে, কতকাল থেকে আমাকে চেনে। বললাম—বোসো।

 ও গালে হাত দিয়ে কৃত্রিম বিস্ময়ের সুরে বলল―ওমা, কি ভাগ্যি! আমাকে আবার বসতে বলা! কক্ষনো তো শুনিনি।

 আমি হেসে বললাম··· ক’দিন তোমার সঙ্গে আলাপ, পান্না? এর মধ্যে বসতে বলবার অবকাশই বা ক’বার ঘটলো?