পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৯
অথৈজল

 গাড়ীতে উঠে পান্না আমার সামনের বেঞ্চিতে বসলো। হু হু করে গাড়ী চলেচে, গাছপালা, গরু, পাখী, ঝোপঝাপ সট্‌সট্‌ করে বিপরীত দিকে চলে যাচ্চে, স্টেশনের পর স্টেশন যাচ্চে আসচে।

 আমার কোনো দিকে নজর নেই।

 আমি ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি, বেশি কথা বলতে পাচ্চিনে ওর সঙ্গে, কারণ গাড়ীতে লোক উঠচে মাঝে মাঝে। এক একবার খুব ভিড় হয়ে যাচ্চে, এক একবার গাড়ী ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তখন পান্না আমার দিকে অনুরাগ ভরা দৃষ্টি মেলে চাইচে।

 মদের চেয়েও তার তীব্র নেশা।

 এক স্টেশনে পান্না বললে—তাহোলে?

 ওর সেই বদমাইশ ধরনের চোখ নাচিয়ে কথাটা শেষ করে। আমি জানি, পান্না খুব বদমাইশ মেয়ে, আমি ওকে দেবী বলে ভুল করিনি মোটেই। দেবী হয় সুরবালাদের দল। দেবীদের প্রতি আমার কোনো মোহ নেই বর্ত্তমানে। দেবীরা এমন চোখ নাচাতে পারে? এমন বদমাশির হাসি হাসতে পারে? এমন ভালমানুষকে টেনে নিয়ে ঘরের বার করতে পারে? এমন পাগল করে দিতে পারে রূপে ও লাবণ্যের দুষ্পাঠ্য?

 দেবীদের দোষ, মানুষকে এরা আকৃষ্ট করতে পারে না। শুধু দেবী নিয়ে কি ধুয়ে খাবো? আমার গোটা প্রথম যৌবন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েচে দেবীদের সংসর্গে। দূর থেকে ওদের নমস্কার করি।