পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৩
অথৈজল

 —চিরকাল তো এখানে কাটালুম।

 —তুমি পারো, আমার কর্ম্ম নয়।

 —আমি কি করবো তুমিই বলো। আমার কি উপায় আছে?

 আমি এ কথার উত্তর দিলাম না। একটু পরে বেলা হোলে এক প্রৌঢ়া ঘরে ঢুকে আমার দিকে দু-একবার চেয়ে দেখে আবার চলে গেল। পান্না কোথায় গেল তাও জানিনে, একাই অনেকক্ষণ বসে রইলাম।

 বেলা ন’টার সময় প্রৌঢ়াটি আবার ঘরে ঢুকে আমার বললে—আপনার বাড়ী কোথায়?

 এ প্রশ্ন আমার ভাল লাগলো না। বললাম—কেন?

 —তাই শুধুচ্চি।

 —যশোর জেলায়।

 বুড়ী বসে পড়লো ঘরের মেজেতে। সে ঘরের মেজেতে সবটা গদি তোশক পাতা, তার ওপরে ধবধবে চাদর বিছানো, এক কোণে দুটো রূপোর পরী তাদের হাতে হুঁকো রাখবার খোল। দেওয়ালে ছটো ঢাকনি পরানো সেতার কিংবা তানপুরো, ভালো বুঝি না। পাঁচ-ছ’খানা ছবি টাঙানো দেওয়ালে। এক কোণে চৌকি পাতা, তার ওপরে পুরু গদিপাতা বিছানা, ঝালর বসানো মশারি, বড় একটা কাঁসার পিকদান চৌকির তলায়। ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকা সত্ত্বেও মনে হয় সবটা মিলে অমার্জ্জিত রুচির পরিচয় দিচ্ছে, গৃহস্থবাড়ীর শান্তশ্রী এখানে নেই।