পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈজল
১৫০

 পান্না খিলখিল করে হেসে গড়িয়ে পড়লো। আমার মুখের দিকে হাসি-উপছে-পড়া ডাগর চোখে চেয়ে বললে, সে কি? আবার বলুন ত কি বল্লেন?

 —তোমার সেই খাণ্ডার মাসী—

 —হ্যাঁ, তারপর?

 —যিনি জন্মাতেই তাঁর মা জিবে মধু দিয়েছিলেন।

 —ওমা! কি কথার বাঁধুনি!

 পান্না হেসে আবার গড়িয়ে পড়লো। কি সুন্দর, লাবণ্যময়ী দেখাচ্ছিল ওকে। হাত দু’টি নাড়ার কি অপূর্ব্ব ভঙ্গি ওর। এ আমি ওর সঙ্গে আলাপ হয়ে পর্য্যন্ত দেখে আসচি। আমার আরও ভাল লাগলো ওর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে। আমি ঠিক বলতে পারি সুরবালা বুঝতে পারতো না আমার কথার শ্লেষটুকু, বুঝতে পারলেও তার রস গ্রহণের ক্ষমতা এত নয়, সে এমন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে পারতো না। পান্নাকে নতুন ভাবে দেখতে পেলুম সেদিন। আমি ভোঁতা মেয়ে ভালবাসিনে, ভালবাসি সেই মেয়েকে মনে মনে, ক্ষুরের মত ধার বুদ্ধির, কথা পড়বা মাত্র যে ধরতে পারে।

 পান্না আমার কথা শুনে আমার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়লো, ওর চোখের চাউনির ভাষা গেল বদলে। মেয়েদের এ অদ্ভুত খেলা দু’মিনিটের মধ্যে। তবে সব মেয়ের পক্ষে সম্ভব নয় এ খেলা তাও জানি। সুরবালাদের মত দেবীর দল পারে না।

 পান্নাকে বললাম—খাবো কি?