পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈজল
১৬২

 —ইস্‌! ঠাট্টা হচ্চে বুঝি। গানের দলে ডুগি তবলা বাজানোর দাম আছে সে তোমার কর্ম্ম নয়। আমি তো যেমন তেমন, নীলির নাচে বাজাতে পারা যার তার বিদ্যেতে কুলোবে না। হ্যাঁ গো মশাই, নীলি থিয়েটারে নাচে তা জানো?

 —সখীর ব্যাচে তো? সে যে-কোনো ঝি নাচতে পারে। তাতে বিশেষ কি কৌশল বা কারিকুরি আছে?

 পান্না হাসতে হাসতে বললে—তুমি নাচের কি বোঝো যে ওই সব কথা বলচো? আমরা কষ্ট করে নাচ শিখেছি, কত বকুনি খেয়ে, কত অপমান হয় তা জানো? কিসে কি আছে না আছে তুমি কিছুই জানো না।

 —তোমার নাচের সরঞ্জাম সব এখানে আছে?

 —নেই? ওমা, তবে করবো কি? সব আছে।

 —আজ আমার সামনে নেচে দেখাবে না?

 —ওবেলা। রাত্তিরে। এখন একটু ঘুমুই। বড্ড ঘুম পাচ্চে।

 পান্না ঘুমিয়ে পড়লো। আমি ওর নিদ্রিত মুখের দিকে চেয়ে থাকি। আমার বয়েস আর ওর বয়েসের কত তফাৎ। আমি চল্লিশ, পান্না ষোলো বা সতেরো। এ বয়সের মেয়ে আমার মত বয়সের লোকের সঙ্গে প্রেমে পড়ে?

 নিশ্চয়ই এ প্রেম। পান্না আমাকে ভালো না বাসলে আমার সঙ্গে ঘর দোর আত্মীয় স্বজন ছেড়ে পালিয়ে এল কেন?