পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৫
অথৈজল

 পান্না এক কাণ্ড করে বসলো। তাড়াতাড়ি উঠে মাথায় আঁচল দিয়ে আমায় এসে এক প্রণাম ঠুকে দিলে।

 আমি হেসে উঠলুম। বলি এ কি ব্যাপার?

 —কেন? নমস্কার করতে নেই?

 —থাকবে না কেন? হঠাৎ এত ভক্তি?

 —ভক্তি করতে কিছু দোষ আছে?

 —কি বলে আশীর্ব্বাদ করবো?

 —বলো যেন শীগ্‌গির করে মরে যাই।

 —কেন জীবনে এত অরুচি হোল কবে?

 —বেশিদিন বেঁচে কি হবে? তুমি তো বামুন?

 —তাতে সন্দেহ আছে নাকি? তুমি কি জাত?

 —বাবা ছিলেন ব্রাহ্মণ। মায়ের মুখে শুনেছি।

 ওসব ভুল কথা। তোমার মা বংশের কৌলিন্য বাড়াবার জন্যে ওই কথা বলেছেন। আমার বিশ্বাস হয় না।

 ভয় কিসের? আমি কি বলবো আমায় বিয়ে কর?

 —সে কথা হচ্চে না। আমি বলচি তুমি যে জাতই হও, আমার কাছে সব সমান। বামুনই হও আর তাঁতিই হও—চা খাবে না?

 —চা এনেচ?

 —খেয়ে নাও জুড়িয়ে যাবে।

 এইভাবে সেদিন থেকে আমাদের নতুন জীবনযাত্রা নতুন দিনে নতুনভাবে শুরু হোল। আমার হাতে নেই পয়সা। বাড়ি থেকে কিছু আনিনি ভাঁড় নিয়ে এলুম জল খাবার জন্যে।