পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈজল
২৩২

হয়ে গেল। ভয়ানক হতাশায় এমনতর দৈহিক অনুভূতি হয় আমি জানি।

 আমি ওর কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম—বেশ, বেশ তাই বলি—

 —কোথায় নিয়ে যাবে ওয়া?

 —তোমার মায়ের কাছে।

 পুলিশের লোকেরা আমার কথা শুনে গাড়ি ডাকলো, ওর জিনিসপত্র গাড়িতে তুলে দিলাম, কি-ই বা ছিল! গোটা দুই তোরঙ্গ। নতুন কেনা চায়ের বাসন ওর জিনিসের সঙ্গেই গাড়িতে তুলে দিলাম। বড় আশা করেছিলাম যাবার সময় যখন আসবে, ও কখনো যেতে চাইবে না। ভীষণ কাঁদবে।

 পন্না নিঃশব্দে গিয়ে গাড়িতে উঠলো।

 একবার কেবল আমার দিকে একটু একদৃষ্টে চেয়ে কি দেখে নিলো। তারপর তাড়াতাড়ি খুব হালকা সুরে বললে—চলি।

 যেন কিছুই না। পাশের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছে, সন্ধ্যের সময় ফিরে আসবে।

 চলে গেল পান্না! সত্যিই চলে গেল।

 একটা পুলিশের লোক আমায় বললে—মশায়, কি করেন!

 রাগের সুরে বললাম—কেন?

 —না তাই বলচি। বলচি, মশায়, এবার পেত্নী ঘাড় থেকে নামলো। বুঝে চলুন। আমরা পুলিশের লোক মশায়। কত রকম দেখলাম, তবুও যে যাবার সময় মায়াকান্না কাঁদলো না, এই বাহবা দিচ্ছি, কতদিন ছিল আপনার কাছে?