যেতেন। বিরহের এ অনুভূতি ভগবান যাকে আস্বাদ করান, সে ভিন্ন করতে পারে না। বিশেষ অবস্থায় পড়তে হয়। সুরবালা বাপের বাড়ি গেলে সে বিরহদশা আসে না। একেবারে হারিয়েচি, এই ভাব আসা চাই। সুরবালা তো কতবার বাপের বাড়ি গিয়েচে, এ দশা কি হয়েচে আমার জীবনে কখনো? তাই বলছিলাম, এখন বুঝছি ইশ্বর ভক্তদের যে তীব্র প্রেমের কথা শুনেচি বা পড়েচি—তা কবি কল্পনা বা অতিরঞ্জিত নয়, অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আমার চেয়ে হয় তো আরো বেশি সত্য।
মনের ব্যাপারই এই। মনের ঠিক অবস্থায় না পড়লে কিছুতেই অন্যের মনের সেই অবস্থা সম্বন্ধে কোনো ধারণাই করা যায় না। এখন হাড়ে হাড়ে বুঝচি যা, আগে এই সব কথা বললে বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস হত না। এ সব জিনিস অনুমানের ব্যাপার নয়, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ব্যাপার। আগে থেকে বললে কে বিশ্বাস করবে? পোড় খাওয়া না হোলে পোড়ার জ্বালা কে ধারণা করবে? সাধ্য কি?
ঠিক এই সময় বৌবাজার দিয়ে শেয়ালদ’এর দিকে যাচ্ছি একদিন, উদ্দেশ্য বৈঠকখানার মোড় থেকে এক মালা নারকোল কেনা, হঠাৎ রাস্তার দিকে চেয়ে থমকে ছাড়ালাম। সনাতনদা যাচ্ছে ফুটপথের কোল ঘেঁসে লালবাজার মুখে। সনাতনদাও আমাকে দেখতে পেয়েছে। নইলে আমি পাশ কাটাতুম। আমার পরনে ময়লা জামা, ধুতিও মলিন। পায়ে পান্নার টাকার কেনা সেই পাঁচটাকা দামের খেলো জুতো জোড়া।