পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈ জল
৩৫

গিয়েছিলেন বড় মুখুজ্যে মশায়ের বাড়ী। তিনি শুনলেন শান্তির মা ঘরের মধ্যে কাঁদছে। শান্তি নেই, তার বাক্সের মধ্যে কাপড় ও দু-একখানা যা সোনার গহনা ছিল, তা নেই। ওদিকে দেখা গেল রামপ্রসাদও নেই।

 আমি অবাক হয়ে বললাম—বল কি?

 সনাতনদা বললে—তোমার কাছে গাঁ শুদ্ধ সবাই আসছে শান্তির মাকে নিয়ে। এর কি করবে করো।

 আমি বললাম—এর কিছু উপায় নেই সনাতনদা। শান্তি নিজের পথ নিজে করেছে। আপদ গেছে গাঁয়ের। এ নিয়ে কোনো গোলমাল হয় এ আমার ইচ্ছে নয়।

 সুরবালা বললে—মেয়েমানুষকে চিনতে এখনও তোমার অনেক দেরি। শান্তি ঠাকুরঝিকে বড্ড ভাল মানুষ ভেবেছিলে না?

 বর্ষা নেমেছে খুব। দুজায়গায় ডাক্তারখানায় যাতাযাত, জলকাদায় সাইকেল চলে না— গরুর গাড়ী যেখানে চলে সেখানে গরুর গাড়ী, নয়তো নৌকো যেখানে চলে নৌকো। ছইয়ের বাইরে বসে দেখি বাঁকে বাঁকে পাড়-ভাঙা ডুমুর গাছ কিংবা বাঁশ ছাড়ের নীচে বড় বড় শোলমাছ ঘোলা জলে মুখ উঁচু করে খাবি খাওয়ার মত ভাসছে, কোথাও ভুস্ করে ডুব দিলে মস্ত বড় কচ্ছপটা।

 মঙ্গলগঞ্জের কুঠীঘাটে নৌকো বাঁধা হয়। নেমে যেতে হয় সিকি মাইল দূরে মঙ্গলগঞ্জের বাজারে—এখানেই আমার একটা শাখা ডাক্তারখানা আজ দুমাস হোল খুলেছি। সপ্তাহের