পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈজল
৪৬

মাথার মণি, ছেলে-ছোকরাদের কথায় রাগ করে? ছিঃ, আপনারা হুকুম করবেন, আমরা তামিল করবো। খান।

 দু-একজন ভিন্ন গ্রামের নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ বললেন—এই তো! এতক্ষণ আপনি এলেই পারতেন ডাক্তারবাবু। কেমন মিষ্টি কথাবার্তা দ্যাখো তো! পেটে বিদ্যে থাকলে তার ধরনই হয় আলাদা।

 হেঁকে বললাম—এদিকে মাছ নিয়ে এসো বেছে বেছে। মুড়ো দাও একটা এখানে—

 যে বেশি ঝগড়াটে, তার পাতে মাছের মুড়ো দিয়ে ঠাণ্ডা করি। সামাজিক ভোজে মাছের মুড়ো দেওয়া হয় সমাজের বিশিষ্ট লোকদের পাতে। চাঁপাবেড়ের ঈশান চক্কত্তির পাতে কস্মিনকালে ভোজের আসরে মাছের মুড়ো পড়েনি—কারণ সে ঝগড়াটে ও মামলাবাজ হোলেও গরীব। সে আজ বাধিয়ে তুলেছিল এক কাণ্ড, ওর পাতে মাছের মুড়ো দেওয়ার দুর্লভ সম্মানে লোকটার রাগ একেবারে জল হয়ে গেল। আমার দিকে চেয়ে হাসি হাসি মুখে বললে— সন্দেশের সময় তুমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকো বাবাজি—

 —হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। এই আমি দাঁড়ালাম, কোথাও যাচ্চি নে।

 ভোজনপর্ব্ব সমাধানান্তে যে যার বাড়ী চলে গেল, সন্ধ্যার কিছু পূর্ব্বে আমি ভাঁড়ার ঘর থেকে ডালঝোলদধিসন্দেশ মাথা হাতে ও কাপড়ে বেরিয়ে নিজের বাড়ী যেতে উদ্যত হয়েছি, মুখুজ্যে জ্যাঠা পেছন থেকে ডেকে বললেন—কে যায়?