পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
অথৈজল

 আমার তত থাকবার ইচ্ছইচ্ছ নেই। খেমটা নাচ দেখবার আমি পক্ষপাতী নই, তবুও ভাবলাম এ সব পর পাড়াগাঁয়ে আমোদ-প্রমোদের তেমন কিছু ব্যবস্থা নেই, আজ বরং একটু থেকে দেখেই যাই। অনেকদিন কোন কিছু দেখিনি। একঘয়ে ভাবে ডাক্তারিই করে চলচি।

 এ সব জায়গায় খেমটা নাচওয়ালীদের বিশেষ খাতির, সেটা আমি জানি। বাজার শুদ্ধ মাতব্বর লোকেরা স্টেশনে যায় খেমটার দলের অভ্যর্থনা করতে। ওদের বিশ্বাস, খেমটাওয়ালীরা সবাই সুশিক্ষিতা ভদ্র ও শহুরে মেয়ে, তারা এ পাড়াগাঁয়ে এসে কোনোরকম দোষ না ধরে, আদর যত্ন ও ভদ্রতার কোন খুঁৎ না বের করে ফেলে। ভূষণ দাঁ সব সময় হাত জোড় করে ওদের সামনে ঘুরচে কখন কি দরকার হয় বলা তো যায় না! শ্রীশ দাঁর আড়তে খেমটার দলের জায়গা দেওয়া হয়েচে—এ গ্রামের মধ্যে এটিই সব চেয়ে বড় আর ভাল বাড়ী।

 সনাতনদা আসলে আজ বেশ হোত। অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে—গল্প-গুজব করবার লোক থাকলে আনন্দে কাটে। বর্ষাকাল হোলেও আজ দুদিন বৃষ্টি নেই। মঙ্গলগঞ্জের ঘাটের উপরেই একটা কদম গাছে থোকা থোকা কদম ফুল ফুটেছে। সজল মিঠে বাতাস, এখানে বৃষ্টি না হলেও কোথাও বৃষ্টি হয়েচে।

 নেপাল প্রামানিকের তামাকের দোকান বাজারের ঘাটের কাছেই। আমাকে একা বসে থাকতে দেখে সে এল।