পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
অথৈজল

 —সে অনেক হাঙ্গমা। কোথায় হাঁড়ি, কোথায় বেড়ি কোথার চাল, কোথায় ডাল!

 একটু পরে নেপাল চা করে নিয়ে এল, তার সঙ্গে চালছোলা ভাজা। আমি বললাম—তুমিও বসো, এক সঙ্গে খাই।

 নেপাল বসে বসে নানারকম গল্প করতে লাগলো। এর জীবনটা বেশ। শোনবার মত জিনিস সে গল্প। এ সব বাদলার বিকেলে চালছোলা ভাজার সঙ্গে মজে ভাল।

 বললাম—নেপাল, দুটি বিয়ে করলে কেন এক সঙ্গে?

 —একসঙ্গে তো করিনি, এক বছর পর পর।

 —কেন?

 —প্রথম পক্ষের বৌ আমাকে না বলে বাপের বাড়ী পালিয়ে গেল, সেই রাগে তাকে ত্যাগ করবো বলে যেই দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছি, অমনি প্রথম পক্ষের বৌও সুড় সুড় করে এসে চুকলো সংসারে। আর নড়তে চাইলে না, সেই থেকেই আছে। দুজনেরই ছেলেমেয়ে হচ্চে। এখন মনে হয়, কি ঝকমারিই করেছি, তখন অল্প বয়স, সে বুদ্ধি কি ছিল ডাক্তার বাবু? এখন পাঁচ পাঁচটা মেয়ে, কি করে বিয়ে দেবো সেই ভাবনাতেই শুকিয়ে যাচ্ছি—আর একটু চা করি?

 —বেশ।

 দুজনেই সমান চা-খোর। রাত আটটা বাজবার আগে আমাদের দু-তিন বার চা হয়ে গেল। নেপাল বসে বসে অনেক সুখ দুঃখের কাহিনী বলে যেতে লাগলো। কোন পক্ষের বৌ ওকে ভালবাসে, কোন্ বৌ তেমন ভালবাসে না—এই সব গল্প।