পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
অথৈজল

মুখশ্রী সুন্দর, সব চেয়ে দেখবার জিনিস তার মাথার ঘন কালো চুলের রাশ—মনে হয় সে চুল ছেড়ে দিলে যেন হাঁটুর নীচে পড়বে। এর গায়ে তত গহনার ভিড় নেই, নীল রংয়ের শাড়ী ও কাঁচুলি চমৎকার মানিয়েচে নিটোল গড়ন দেহটিতে।

 ওরা নাচ গান আরম্ভ করেচে।

 বড় মেয়েটি নাচতে নাচতে আমাদের কাছে আসচে, কারণ সে বুঝেচে এই চাষাভুষোর ভিড়ের মধ্যে আমরাই সম্ভ্রান্ত। সে মেয়েটা বার বার এসে আমাদের কাছে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচতে লাগলো।

 আবদুল হামিদ চৌধুরী দুটাকা প্যালা দিলে। প্যালা দিয়ে সে সগর্বে আমাদের দিকে চাইতে লাগলো। গোবিন্দ দাঁ সেটা সহ্য করতে পারলে না, পাড়াগায়ের ইউনিয়নের প্রেসিডেণ্ট কি তাদের মত শাঁসালো ব্যবসাদারের কাছে লাগে? থাকলোই বা বাড়ীতে একচল্লিশটা ধানের গোলা। অমন ধেনো মহাজনকে ক্লাইব স্ট্রীট ও রাজা উডমণ্ট স্ট্রীটের রং ও হার্ডওয়ারের বাজারে এবেলা কিনে ওবেলা বেচতে পারে, এমন বহুৎ ধনী সওদাগর তার দোকানে এসে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বৌভাতের নেমন্তন্ন করে যায়।

 গোবিন্দ দাঁ একটা রুমালে দুটি টাকা বেঁধে খেমটাওয়ালীর দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে।

 আমি এ পর্য্যন্ত কিছু দিই নি, শেষ পর্য্যন্ত যখন কৃপণ প্রহ্লাদ সাধুখাঁও একটা টাকা প্যালা দিয়ে ফেললে, তখন আমার কেমন লজ্জা লজ্জা করতে লাগলো। না দিলে এই