সব অশিক্ষিত পাড়াগাঁয়ে লোক, যারা নিজেদের যথেষ্ট গণ্য মান্য ও সম্ভ্রান্ত বলে ভাবে, তারা আমার দিকে কৃপার চোখে চাইবে। এরা ভাবে খেমটার আসরে বসে খেমটাওয়ালীকে প্যালা দেওয়াটা খুব একটা ইজ্জতের কাজ বুঝি। এ নিয়ে আবার এদের আড়াআড়ি ও বাদাবাদি চলে। এক রাত্রে আসরে বসে বিশ-চল্লিশ টাকা প্যালা দিয়ে ফেলেচে ঝোঁকের মাথায় এমন লোকও দেখেচি।
এবারে নাচওয়ালিটি আমার কাছে এসে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গাইতে লাগলো:
ও সই পিরিতির পয়সা নিয়ে ঘুরে মরি দেশ বিদেশে—
আমারই সামনে এসে বার বার গায়, ভাবটা বোধ হয় এই, সবাই দিচ্ছে তুমি দেবে না কেন? আমার পকেটে আজকার পাওনা দশ বারোটি টাকা রয়েছে বটে, কিন্তু আমি ভাবছি, ওদের দেখাদেখি আমি যদি এই নর্ত্তকীদের পাদপদ্মে এতগুলো টাকা বিসর্জ্জন দিই তবে সে হবে ঘোর নির্ব্বুদ্ধিতার কাজ।
এই সময় আমার নাকের কাছে রুমাল ঘুরিয়ে আবদুল হামিদ চৌধুরী আবার দুটাকা ছুঁড়ে ফেলে দিলে খেমটাওয়ালীর দিকে। দেখাদেখি আরও দু-তিন জন প্যালা দিলে এগিয়ে গিয়ে।
এইবার সেই অল্প বয়সী নর্ত্তকীটি আমার কাছে এসে গান গাইতে লাগলো। বেশি বয়সের মেয়েটিই ওকে আমার সামনে এগিয়ে আসতে ইঙ্গিত করলে, সেটা আমি বুঝতে পারলাম। ও তো হার মেনে গেল, এ যদি সফল হয় কিছু আদায় করতে।