পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮১
অথৈজল

কখনও দেখিনি। মেয়ে দেখেচি সুরবালাকে—শান্ত, সংযত ভদ্র, বড় জোর, দেখেচি শান্তিকে। না হয় নির্জ্জন রাস্তায় অবসর খুঁজে কথা বলে, তাও দরকারী কথা, নিজের গরজে। এমন সাবলীল ভঙ্গি তাদের সাধ্যের বাইরে। তাদের দেহে হয় না, জন্মায় না। ছেলেমানুষ নারী বটে, কিন্তু সত্যি এই নারী।

 বললাম—হাসচো কেন? কি হয়েচে?

 —মাথা ধরেচে। অসুখ হয়েচে।

 —মিথ্যে কথা!

 —উঁহুঁ-হুঁ! ভারী ডাক্তার আপনি!

 যেন কত কালের পরিচয়। কোনো সঙ্কোচের বালাই নেই।

 ওর সামনের চেয়ারে বসে ওর হাত ধরলাম। ও হাত টেনে নিলে না। নির্জ্জন ঘরে ও আর আমি। রাত একটা কিংবা দুটো। কে জানে কেই বা খবর রাখে। আমার মনে হোল জগতে ঐ মেয়েটি আমার সামনে বসে আছে যুগ যুগ ধরে। সারা বিশ্বে দুটি মাত্র প্রাণী—ও আর আমি।

 আমি বললাম—তোমার নাম কি?

 —কি দরকার আপনার সে খোঁজে?

 —তবে এখানে এসেচ কেন?

 —ওষুধ দিন। হাতটা ধরেই রইলেন যে, দেখুন না হাত।

 —কিছুই হয়নি তোমার।

 —না, সত্যি আমার মাথা ধরেছিল।

 —এখন আর নেই।