পাইতেছে। বাগানের মধ্যে একখানি দ্বিতল অট্টালিকা। অট্টালিকা হইতে প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে বাগানের একপার্শ্বে এক খানি সামান্য কুটীর। গৌরীশঙ্কর সেই কুটীরদ্বারে দণ্ডায়মান হইলেন।
আমি বুঝিতে পারিলাম, ফকিরের মৃতদেহ সেই কুটীরেই ছিল। গৌরীশঙ্কর কুটীরের দ্বার খুলিয়া দিলে আমি তন্মধ্যে প্রবেশ করিলাম। দেখিলাম, ঘরে বিশেষ কোন আসবাব নাই। মাটীর মেঝের উপর মাদুর বা সতরঞ্চ পাতা ছিল না। ঘরের একপার্শ্বে সামান্য একখানি খাটিয়া। তাহার উপর একখানি তোষক, দুইটা বালিশ ও একখানি পরিষ্কার চাদর। খাটিয়ার নিম্নে একটা গাঁজার কলিকা পড়িয়া রহিয়াছে। তাহারই নিকট একটা মৃন্ময় পাত্রে খানিকটা তামাক, কয়েকখানি টিকে, একটা দিয়াশলাইএর বাক্স ও তিনটা কলিকা। বিছানার অবস্থা দেখিয়া বোধ হইল, ফকির পূর্ব্বরাত্রে সেখানে শয়ন করে নাই। ঘরের মেঝের উপর ফকিরের মৃতদেহ উপুড় হইয়া পড়িয়া ছিল। তাহার মস্তকের পশ্চাদ্দিক হইতে রক্তস্রোত নির্গত হইতেছিল;—ঘরে যেন রক্তের নদী প্রবাহিত হইতেছিল। দেহের পার্শ্বে একগাছি মোটা লাঠী পড়িয়াছিল। লাঠীগাছটী গ্রহণ করিয়া উত্তমরূপে পরীক্ষা করিলাম। দেখিলাম, তাহাতে রক্তের চিহ্নমাত্র ছিল না। লাঠীগাছটা মৃতদেহের পাশে থাকিলেও তদ্দ্বারা যে ফকির আহত হয় নাই তাহা বেশ বুঝিতে পারিলাম। ফকিরের বয়স গৌরীশঙ্করেরই মত প্রায় চল্লিশবৎসর। কিন্তু এই বয়সেই তাহার শরীর শুষ্ক জীর্ণ ও শীর্ণ হইয়া গিয়াছে। তাহার চক্ষু কোটরগ্রস্ত হইয়াছে, ললাট কুঞ্চিত হইয়াছে, অনেকগুলি চিন্তারেখা দেখা দিয়াছে, তাহার