পাতা:অদ্ভুত ফকির - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
দারোগার দপ্তর, ১৯৫ সংখ্যা।

জমীদারী সমান অংশে ভাগ করিয়া দিবেন। হরশঙ্কর ইহাতে বিরক্ত হইল। সে বলিল যে, সে যখন গৌরীশঙ্করের অপেক্ষা অন্তত অর্ধ ঘণ্টা কাল বয়সে বড়, তখন অংশ সমান হইতে পারে না; তাহাকে জমীদারীর দশ আনা অংশের এবং গৌরীশঙ্করকে ছয় আনা অংশের ভাগ দিতে অনুরোধ করিল। গৌরীশঙ্কর ইহাতে মহা রাগান্বিত হইল এবং উভয় ভ্রাতায় অনেক দিন ধরিয়া অত্যন্ত বিবাদ চলিতে লাগিল। এই সময়ে গৌরীশঙ্কর কোন বিবাহ উপলক্ষে এখান হইতে প্রায় ছয় ক্রোশ দূরে কোন গ্রামে যাইতে বাধ্য হইয়াছিল। হরশঙ্কর এই সুবিধা পাইয়া পিতার নিকট নিজের মত বজায় রাখিবার জন্য বার বার অনুরোধ করিতে লাগিল। নীলরতন কিন্তু গৌরীশঙ্করের অসাক্ষাতে কোন কার্য্য করিতে স্বীকৃত হইলেন না। তখন পিতা পুত্রে বিষম বিবাদ হইল। সকলেই সেই কলহের কথা জানিতে পারিল। পরদিন প্রাতেই নীলরতনকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখা গেল। তাহার মস্তকে গুরুতর প্রহারের চিহ্ন ছিল। তিনি হরশঙ্কর-হরশঙ্কর বলিতে বলিতে প্রাণত্যাগ করিলেন। হরশঙ্করের লাঠী রক্তাক্ত অবস্থায় নীলরতনের পার্শ্বেই ছিল। হরশঙ্করের ঘর হইতে তাহার রক্তমাখা কাপড় বাহির হইল। হরশঙ্কর পিতৃ-হত্যাকারী বলিয়া ধৃত হইল। পূর্ব্বদিন রাত্রে সে পিতার সহিত অত্যন্ত বিবাদ করিয়াছিল, সে কথা হরশঙ্কর স্বীকার করিল। কিন্তু সে পিতাকে হত্যা করে নাই, এ কথাও দৃঢ়রূপে বারম্বার বলিয়াছিল। বিচারে তাহার ফাঁসি হইল না—যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হইল। হরশঙ্কর আণ্ডামানে নীত হইল। গৌরীশঙ্কর জমীদারীর একমাত্র উত্তরাধিকারী হইল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ সে সুখে স্বচ্ছন্দে সংসার-যাত্রা নির্ব্বহ করিতে