পাতা:অদ্ভুত ভিখারী - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
দারােগার দপ্তর, ১৪৪ সংখ্যা।

 আমরা আর সময় নষ্ট না করিয়া ধীরে ধীরে সেই কামরায় প্রবেশ করিলাম। আসামী প্রথমে আমাদিগকে দেখিয়া পার্শ্বপরিবর্ত্তন করিল, পরে আবার নিদ্রা যাইবার জন্য মুখ ফিরাইয়া কম্বলের উপর মস্তক ন্যস্ত করিল। আমি তাহাকে উঠাইয়া তাহাকে একবারে বিবস্ত্র করিয়া ফেলিলাম ও একখানি বড় স্পঞ্জ জলসিক্ত করিয়া তাহাকে উত্তমরূপে ঘর্ষণ করিতে লাগিলাম। এইরূপে কিয়ৎক্ষণ ঘর্ষণ করিতে করিতে ঐ ফকিরের অঙ্গস্থিত সমস্ত ময়লা ইত্যাদি দূর হইয়া গেল, সে তখন অপর রূপ ধারণ করিল। ডাক্তার এই অবস্থা দেখিয়া নিতান্ত বিস্মিতের সহিত বলিয়া উঠিলেন, “আমার বোধ হইতেছে, ইনিই নরেন্দ্রকৃষ্ণ।” যতবার আমি স্পঞ্জ দিয়া আসামীর গাত্র ঘর্ষণ করিতে লাগিলাম, ততবারই যেন গাত্র হইতে এক এক পুরু ছাল উঠিয়া আসিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে সেই কদাকার দেহের সমুদায় ময়লা উঠিয়া গেল, সেই উল্টান ঠোঁট কোথায় অদৃশ্য হইল। চুলের লাল দাগ তখনই যেন কোথায় চলিয়া গেল এবং তাহার পরিবর্ত্তে অতি সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ কেশগুচ্ছ শোভা পাইতে লাগিল, অমন মলিন মুখ সুন্দর হইল, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তেমন কদাকার লোক যেন সুন্দর যুবকে পরিণত হইল। আসামী এতক্ষণ কোন কথা কহে নাই। কিন্তু যখন দেখিল, যে তাহার ছদ্মবেশ একেবারে অদৃশ্য হইল, তখন সে চীৎকার করিতে করিতে সেই স্থানের কম্বলের মধ্যে তাহার মস্তক লুকাইবার চেষ্টা করিল।

 এই সকল ব্যাপার দেখিয়া ডাক্তার আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিল, “কি আশ্চর্য্য! এই লোককেই পাওয়া যাইতেছে না।