পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড । ३ 0; "উন্মত্ত, রান্তচিন্ত এবং কৈকেয়ীর বশবর্ত্ত ভরবন্ধন করিঃ ওহীর সাহায্যকারী তদীয় মাতুলদিকেও নিহত করিব। পুর্ব্বকালে লোকদাহক কালানলের হ্যায় আমার পরাক্রম, সকলে অবলোকন করুক ; হে শত্রুদমন রাম! আপনি অভিষেকের । জন্য যত্ন করুন; তাহতে যাহার বিস্তু করিবে, আমি । শরাসন-হস্তে তাহাদিগকে বধ করিব,” সৌমিত্র। এইরূপ বলিতে থাকিলে রঘুনন্দন রাম স্তাহাকে । আলিঙ্গন করিয়া বলিলেন;–“হে রঘুকুল শ্রেষ্ঠ! তুমি বীর এবং আমার অতিশয় হিতৈষী ; আমি তোমার সমস্তই জানি সত্য, কিন্তু এখন বিক্রম প্রকাশের সময় নহে। এই রাজ্য এবং দেহাদি, যাহা কিছু দেখা যাইতেছে, যদি তৎসমস্ত সত্য হইত ; তাহ হইলে তোমার এই প্রয়াস কথঞ্চিৎ সফল হইতে পারিত। ভোগসকল, জলদ-জাল-সঞ্চারিণী বিদ্যুল্পতার স্যায় চঞ্চল ; এবং আয়ুও অনল-মস্তপ্তলৌহপিণ্ডে নিপতিত জলবিন্দুর ন্যায়ু ক্ষণস্থায়ী। বিষধরের কণ্ঠকুহরে যাইতে যাইতেও ভোজনের জন্য দংশ (ডাশ) দিগের অপেক্ষা করা ভেকের পক্ষে যেরূপ,—কালরূপ-মহাসর্প-কবলিত লোক, দিগের পক্ষে অস্থায়ী ভোগসকলের অপেক্ষা করাও তদ্রুপ । মনুষ্য, ভোগের জন্য দিবা রাত্রি কষ্ট. শ্রেষ্ঠে নানাবিধ কর্ম্ম করিতেছে ; কিন্তু দেহ,—পুরুষ হইতে ভিন্ন—ইহা বিচারিত ; সুতরাং দেহ জড়, ভোগে অসমর্থ ; এবং পুরুষ, জগতে কোন ভোগ্যবস্তুই ড়োগ করেন না। পিতা, মাতা, পুত্র, ভ্রাত, পত্নী এবং বন্ধুপ্রভৃতির সম্বন্ধ, পানশালাতে বহু পান্ত সমাগমের হার এবং নদী মধ্যে স্রোতঃসমাস্থত কাঠ-রাশি-সম্মিলনের ন্যায় অস্থির। নিশ্চিত আছে যে, সম্পত্তি,—ছায়ার দ্যায় চপল ; যৌবনতরঙ্গের ন্যায় অস্থির ; স্ত্রী-সস্তোগ-সুখ স্বপ্ন-তুল্য ; এবং পরমায়ু অল্প ; তথাপি প্রাণীর এত অভিমান ! নিরস্তর রোগাদিসঙ্কুল সংসার, স্বপ্ন এবং গন্ধর্ব্ব, নগরের * সদৃশ ; মূঢ় ব্যক্তিই তাহার অনুগত হয়। হুর্য্যের অস্তোদয়ে আয়ুঃক্ষয় হওয়ায় অপরের জরা ও মরণ দেখিতে পাইয়াও লোকে কোনরূপেই আপনার ঐ জরা মরণের অবগুস্তাবিত্ব উপলব্ধি করিতে পারে না। প্রত্যুত প্রতিদিন রাত্রিতেই সেইই, দিনসেইই রাত্রি—এইরূপ বুদ্ধি মোহবশতঃ ভোগে আসক্ত হয়; সময় স্রোতের গতিশীলতার দিকে দৃষ্টি পাত করে না। এই আয়ু আমকুহুস্থিত জলের ন্যায়

  • লুক্টোপরি ভ্রম-দৃষ্ট বিচিত্র সোধাদির নাম গন্ধর্ব্ব-নগর। *

প্রতিক্ষণেই বিগলিত হইতেছে। হায় ! রোগ সমূহ, শত্রুগণের হয় শরী:কে প্রহর করিতেছে । জরা, ব্যাস্ত্রীর স্তায় সম্মুখে থাকিয়া ভয় দেখাইতেছে। মৃত্যু, সঙ্গে সঙ্গেই চলিতেছে ; কেবল কাল প্রতীক্ষা করিয়া রহিয়াছে । মনুষ্য, কৃমি-বিষ্ঠা-ভম্মময় এই দেহে “অহং’ জ্ঞান করিয়া “আমি লোক-বিশ্রুত রাজা” বলিয়। মনে করে । কিন্ত—ত্বক, অস্থি, মাংস, বিষ্ঠা, মুত্র, রেত, রক্তাদিময়, বিকারী ও পরিণামী দেহ,—আত্মা হইবে কিরূপে ?—বল। লক্ষ্মণ! ষে রাগাদিদোষ অবলম্বনে তুমি ত্রৈলোক্য দগ্ধ করিতে ইচ্ছা করিতেছ; সেইসকল দোষ দেহাভিমানী ব্যক্তির হইয় থাকে। “দেহ আমি” এইরূপ বুদ্ধিই অবিদ্যা বলিয়া কীর্ত্তিত। দেহ “আমি” নহে "চৈতন্য স্বরূপ আত্মা আমি” এই বুদ্ধি-বিদ্যা বলিয়া কথিত । অবিদ্যা সংসারের প্রবর্তৃক ; বিদ্যা তাহার নিবর্ত্তক। অতএন্ম মুক্তি পাইতে অভিলাষী ব্যক্তিগণ, বিদ্যা-অভঙ্গসে সদা যত্ব করিবে । হে শত্রুমুদন | কিন্তু তাহাতে কাম ক্রোধ প্রভৃতি অনেক শত্রু আছে। তন্মধ্যে আবার ক্রোধই সর্ব্বদা মোক্ষের বিস্তু করিতে সমর্থ। পুরুষ এই ক্রোধে আবিষ্ট হইলে, পিতা, ভ্রাত, মুছৎ এবং সখাদিগকেও বধ করে। ক্রোধ, মনস্তাপের মুল ; ক্রোধ সংসারের বন্ধন ; এবং ক্রোধ হইতে ধর্ম্ম, ক্ষয় হয়, অতএব ক্রোধ পরিত্যাগ কর। এই ক্রোধ মহাশত্রু ; তৃষ্ণ, বৈতরণী নদীর দ্যায় দুস্তর। সন্তোষ, নন্দন-কাননের তুল্য ; এবং শান্তিই অভি. লাষ-পুরণী। অতএব তুমি আজ শান্তিগুণ অবলম্বন কর । তাহা হইলে আর তোমার শত্রু থাকিবে না। আত্মা—শুদ্ধ, স্বয়ং জ্যোতিঃস্বরূপ, নির্ব্বিকার ও নিরাকার, অতএব তাহা—দেহ, ইন্দ্রিয়, মন প্রাণ, ও বুদ্ধি প্রভৃতি হইতে বিভিন্ন । যাবৎ আত্মাকে দেহ, ইম্রিয় ও প্রাণ হইতে বিভিন্ন বলিয়া না জানিতে পারে, তাবৎ মুণ-শীল হইয়া সংসার দুঃখ রাশি দ্বারা নিপীড়িত হইয়া থাকে। অতএব তুমি সর্ব্বদা আত্মাকে বুদ্ধি-প্রভূতি হইতে ভিন্ন বলিয়া মনে মনে ভাবন কর, কিন্তু ঐ বুদ্ধি-প্রভূতিকে অব লম্বন করিয়াই লোক-ব্যবহারের অনুবর্তী হইয়া চল, সুখই হউক আর দুঃখই হউক, যাহাই প্রারব্ধ হইবে ; তৎসমস্ত ভোগ করবে ; কিছুতেই খেদযুক্ত হইও না। সংসার-প্রবাহে পতিত হইয়া কর্ম্ম করিতে থাকিলেও কর্ম্মফলে লিপ্ত হইবে না। হে রাঘব । বাহ সকল-বিষয়েই কর্তৃবৎ ব্যবহার করিলে ও অন্তঃস্বভাব যথার্থ বিশুদ্ধ রাখিলে তুমি কর্ম্মফলে