পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড থাকিলে, কুশ-কাশ-কণ্টক আমার কুহুম-শ্যা-তুল্য প্রতীয়মান হইবে, সন্দেহ নাই। আমি তোমাকে ক্লেশ দিব না; প্রত্যুত কার্য্যসাধন করিয়া দিব। বালাকালে কোন একজন জ্যোতিঃশাস্ত্র-বিশারদ আমাকে দেখিয়া বলিয়াছিল, “পতির সহিত তোমার বনবাস হইবে।” ব্রাহ্মণের বাক্য সত্য হউক, আমি তোমার সহিত যাইব । আরও কিছু বলিতেছি, শুনিয়া আমাকে বনে লইয়া চল ; অনেক বার অনেক ব্রাহ্মণের মুখে রামায়ণ শুনিয়াছি; সীতা ব্যতীত রাম বনে গিয়াছেন, ইহা কোন খানে আছে কি –বল । বিশেষ আমি ত তোমার সকল কার্ধ্যে সম্পূর্ণ সহায় ; অতএব তোমার সহিত গমন করিল। যদি আমাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে চাহ; তাহা হইলে তোমার সম্মুখেই প্রাণত্যাগ করিব।” রঘুনন্দন, সীতার এই রূপ দৃঢ় নিশ্চয় বুঝিয়া বলিতে লাগিলেন —“দেবি । শীঘ্র আমার সহিত বনে চল; হার ও অন্যান্ত আভরণ, অবিলম্বে অরুন্ধতীকে প্রদান কর । অহে ! আমরা সকলেই ব্রাহ্মণগণকে ধন দান করিয়া বনগমন করি” । এই বলিয়া শীঘ্র লক্ষ্মণদ্বারা দ্বিজগণকে ভক্তিভাবে আহ্বানপূর্ব্বক রঘুবংশ-শ্রেষ্ঠ রাম, সেই সকল সুশীল গৃহস্থ পণ্ডিত ব্রাহ্মণগণকে সানন্দচিত্তে শত বৃন্দ গো, বহু ধন, দিব্য বস্ত্র এবং আভরণসমুদায় প্রদান করিলেন । সীতা অরুন্ধতীকে প্রধান প্রধান অভিরণ দান করিলেন। রাম, মাতৃ-সেবকদিগকে অনেক প্রকার ধন দান করিলেন। আর নিজ-অন্তঃপুরবাসী সেবকগণকে ও নগর-জনপদবাসী ব্রাহ্মণগণকে *সহস্ৰ সহস্র ধন প্রদান করিলেন । ধনুৰ্দ্ধর লক্ষ্মণও কৌসল্যার নিকট সুমিত্রাকে সমর্পণ করিয়া তথা হইতে আসিয়া রাম-সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। রাম, সীতা, লক্ষণ—সকলেই রাজভবনে গমন করি, লেন। সহস্ৰ কন্দপের ন্যায় সুন্দর মূর্ত্তি শুামাঙ্গ শ্রীরাম, কান্তিচ্ছটায় দিয়গুল উদ্ভাসিত করত সীত৷ ও অনুজের সহিত রাজপথে গমন করিতে লাগিলেন ; পেীরজানপদগণ কুতূহল-সহকারে দেখিতে লাগিল ; রাম সানন্দ-চিত্তে তাহাদিগকে দেখা দিয়া, চরণ-বিন্যাসে নিখিল ভুবন পবিত্র করিতে করিতে পিতৃ-ভবন প্রাপ্ত হইলেন । । চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত । পঞ্চম অধ্যায় । মহাদেব কহিলেন;–কৈকেয়ীর প্রতি বরদানাদি শ্রবণে অতিশয় দুঃখিত নগরবাসীগণ সকলে ঐরামকে জানকী ও লক্ষ্মণের সহিত পথে আসিতে ২৭• দেখিয়া পরস্পরে পরম্পরের প্রতি দৃষ্টিপাতপূর্ব্বক বলাবলি করিতে লাগিল ;–“হায় ! *কামবশ রক্ত দশরথ, সত্যপ্রতিজ্ঞ প্রিয়পুত্রকে স্ত্রীর জন্য পরিত্যাগ করিলেন । তাহার সত্যশীলতা কোথায় ? কৈকেয়ী এইরূপ দুষ্ট হইল কিরূপে ই ক্রক অতি মূঢ়ৰুদ্ধি মেই কৈকেয়ী সাতাশীল প্রিয়কারী রামকেই ব: নির্ব্বাসিত করিল কেন ? হে জনগণ! এখানে বাস করা উচিত নহে; ঐরাম,ভার্য্যাও অনুজের সহিত যেখানে গমন করিতে অভিলাষ করিতেছেন—অদ্যই আমরা সেই কাননে গমন করি । সকলে দেখুন ;–জনকতনয় পদব্রজে গমন করিতেছেন। যে ভুবন-সুন্দরী জানকীকে পুরুষেরা কখন নয়নগোচর করে নাই, সেই জানকীও জনসাধারণের মধ্যে প্রকাশুভাবে গমন করিতেছেন ; দেখ ! নিখিললোকের মধ্যে অদ্বিতীয় সুন্দর প্রভু ত্রীরামও হস্তী অশ্ব প্রভৃতি যান পরিত্যাগ করিয়া পদব্রজে গমন করিতেছেন। তোমরা দেখ, কৈকেয়ী নামে এক, জন সর্ব্বনাশিনী রাক্ষসী জন্মিয়াছে। সীতার পদত্রজগমনে রামেরও দুঃখ হইতেছে ; এ বিষয়ে বিধিই বলবান ; পুরুষের যত্ব দুর্ব্বল। সাধুবৃন্দ এই রূপে দুঃখাকুল হইতে থাকিলে মুনিবর বামদেব সেই সাধুগণের মধ্যবর্তী হুইয়া বলিতে লাগিলেন – “রাম, কিম্বা সীতার জন্য শোক করিও না, আমি তত্ত্বকথা বলিতেছি ;–এই রাম আদিনারায়ণ পরম বিষ্ণু বলিয়া স্কৃত হইয়াছেন। এই জনক-নন্দিনী, যোগমায়া বলিয়া প্রসিদ্ধ সেই লক্ষ্মী ; তার অনন্তদেব, সম্প্রতি লক্ষ্মণ নাম ধারণ করিয়া সেই বিষ্ণুর অনুগমন করিতেছেন। ইনি (রাম ) মায়া গুণ যোগে সেই সেই আকার-যুক্তের দ্যায় প্রতীয়মান হন। ইনিই রজো-গুণ-যোগে “ব্রহ্মা’ রূপ হইয়া বিশ্ব-স্বষ্টি করিয়াছেন । সত্ত্ব-গুণের আবেশে বিষ্ণুরূপে ত্রিভুবনের পালন করিতেছেন এবং ইনিই অস্তে তমো-গুণ-ৰোগে রুদ্ররূপে জগৎ সংহার করেন। এই রাঘব, পূর্ব্বকালে মৎস্যরূপী হইয়া নিজভক্ত বৈবস্বত মনুকে নৌকাতে আরোহণ করাইয়া দৈনন্দিন প্রলয়ের কাল পূর্ণ হওয়া পর্য্যন্ত রক্ষা করিয়াছিলেন। পূর্ব্বকালে সমুদ্রমন্থন হইতে হইতে মন্দর পর্বত সুতল প্রবিষ্ট হইলে, রঘুবর কুর্ম্মরূপী হইয় ঐ পর্ব্বতকে স্বীয় পৃষ্ঠে ধারণ করলেন। যখন পৃথিবী রসাতল মগ্ন হুইয়াছিল, সেই প্রলয় সময়ে রঘুনন্দন শূকর মূর্ত্তি ধারণ করিয়া সেই ধরণকে দশন শিখর দ্বারা উত্তোলিত করিলেন। পূর্ব্বকালে নরসিংহ মূর্ত্তি ধারণ করিয়া প্রহাদকে বর দেন ; এবং