পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধাকাণ্ড । করিয়া কোথায় যাইলে ; পিতঃ ! আমাকে রাজারামের হন্তে সমর্পণ না করিয়া কোথায় যাইলে ?” এইরূপে রোরুদ্যমান ভূতলে নিপতিত আলুলায়িত কেশ-পাশ পুত্রকে ধরিয়া তুলিয় তাহার নয়ন মুছাইয়া দিয়া কৈকেয়ী বলিল ; “আশ্বস্ত হও; তোমার মঙ্গল ; আমি সকল বিষয় সম্পন্ন করিয়া রাখিয়াছি।" | ভরত তাহাকে বলিলেন;–“পিতা মৃত্যু সময়ে কি ৷ বলিয়াছিলেন।” কৈকেয়ী দেবী নির্ভয়ে ভরতকে বলিল ; বার বার “হ রাম। রাম সীতা ও লক্ষ্মণ"— এই বলিয়া অনেক্ষণ বিলাপকরত দেহত্যাগ করিয়া স্বর্গে গমন করিয়াছেন । ভরত তাহাকে বলিলেন ;–“মাগো ! তখন রাম, সীতা, বা লক্ষ্মণ, র্তাহার নিকটে ছিলেন না কি ? তাহারা কোথায় গিয়াছিলেন ?” কৈকেয়ী বলিল ;–তোমার পিতা, রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করিবার জন্য ত্বর করেন ; তখন আমি তোমাকে রাজ্য দেওয়াইবার জন্য সেইকার্য্যে বিস্তু করি। বর-প্রদ রাজা পুর্ব্বে | আমাকে দুইটী বর প্রদান করিতে চাহিয়াছিলেন ; তখন তাহা লই নাই। এই সময় সেই বর দুইটী যাক্ত করি ; তন্মধ্যে একটর ফল তোমার সমগ্র রাজ্য ; অপরটর ফল রামের মুনিব্রত অবলম্বন পূর্ব্বক বনবাস। অনন্তর তোমার পিতা সত্যপরায়ণ | রাজা তোমাকে রাজ্য দিয়া রামকে বনে পাঠাইয়া গিয়াছেন ; পতিব্রতা সীতা রামের অনুগামিনী হই য়াছে; লক্ষণও ভ্রাতৃস্নেহ প্রদর্শন করত রামের অনুগমন করিয়াছে। এইরূপে তাহারা সকলে বনগমন করিলে নৃপতিশ্রেষ্ঠ রাজা তাহাদিগকেই চিন্তা ও “রাম। রাম” বলিয়া প্রলাপ করত মরিয়াছেন।” মাতার এইকথা শুনিবামাত্র ভরত অচৈতন্য হইয়া বজ্রাহত বনস্পতির স্থায় ভূমিতলে নিপতিত হইলেন। তখন কৈকেয়ী তাহাকে তদবস্থাপন্ন দেখিয় দুঃখিত ভাবে পুনরপি বলিতে লাগিল ;–“বৎস! তুমি শোক করিতেছ কেন ? তুমি বিশাল রাজ্য পাইয়াছ! একি তোমার দুঃখ করিবার সময় !" মাতা এইরূপ বলিতে আসিলে, ভরত দৃষ্টি দ্বারা যেন তাহাকে দগ্ধ করত বলিতে লাগিলেন;–“রে দারুণে! রে পাপ-চারিনি! তুই ভর্তৃঘাতিনী; অতএব তুই আমার অনালাপ্য ; রে পাপীয়সি ! আমি তোর গর্ভে জন্সিয়াছি, এজন্য আমিও পাপিষ্ঠ;—ইহা এখন বুঝিতেছি; আমি অগ্নি প্রবেশ করিব ; অথবা আমি বিষপান করিব; কিংবা খড়গ প্রহারে জার্ম্ম-হত্যা করিয়া যমালয়ে গমন করিব। রে পতিত্বাতিনি। রে দুষ্টে । তুই কুষ্ঠীপাক-নরকে ՏՓ গমন করিবি" ; এইরূপ কৈকেয়ীকে নিরতিশয় ভংসনা করিয়া তিনি কৌসল্যা-ভবনে গমন করিলেন । কৌসল্য। ভরতকে দেখিয়া মুক্ত-কণ্ঠে রোন করিতে লাগিলেন ; ভরতও তখন রোঙ্গন করিতে করিতে কৌসল্যার পদতলে পতিত হইলেন। সাধবী যশস্বিনী রাম-জননী স্বামি-পুত্র-বিরহে কুশ ও বিশুদ্ধ-মুখী হইয়াছিলেন ; তিনি ভরতকে আলিঙ্গন করিয়া অশ্রীপুর্ণনয়নে বলিলেন;–পুত্র রে! তুই যখন দূরে ছিলি, তখন এই সকল সর্ব্বনাশ হইয়া গিয়াছে; তুই তোর মা'র মুখে তাহার আচরণ সমস্ত শুনিয়াছিস্ ? আমার পুত্র রঘুনন্দন রামচন্দ্র, চীর বস্ত্র পরিধান ও জটাভার বন্ধনপুর্ব্বক দুঃখসাগরনিমগ্ন আমাকে পরিত্যাগ করিয়া ভার্য্য৷ ও লক্ষ্মণ সমভিব্যাহারে বন গমন করিয়াছে। হা আমার রাম । হা রঘুকুলু-নাথ ; তুমি পরাৎপর পরমাত্মা ; আমার গর্তে উৎপন্ন হইয়াছ ; দুঃখ তথাপি আমাকে পরিত্যাগ করিতেছে না। অতএব আমি নিশ্চয় করিয়াছি—বিধাতাই বলবান" ভরত সাতিশয় শোকে তাহাকে বিলাপ করিতে দেখিয়া পদযুগল গ্রহণপূর্বক বলিলেন;–“মা ! আমার কথা শুনুন ; ঐরামের রাজ্যাভিষেকবিষয়ে কৈকেয়ী যাহা করিয়াছে, তাহা অথবা তৎসংক্রান্ত অন্য বিলুবিসর্গ কিছু যদি আমার জ্ঞাতসারে হইয়া থাকে, কিংবা আমি সে বিষয়ে যদি ঘূণাক্ষরেও প্রবৃত্তি দিয়া থাকি, তাহা হইলে, যেন মা ! আমার শতব্রহ্মহত্য সস্তুত পাপ হয়। আমি যদি এবিষয়ে কিছুমাত্র জানি, তাহ হইলে, খড়গপ্রহারে অরুন্ধতীসমেত-বসিষ্ঠ-বধে যে পাপ হইতে পারে, আমার যেন সেই সমস্ত পাপ হয়।” এইরূপ শপথ করিয়া ভরত, তখন রোদন করিতে লাগিলেন। কৌসল্য র্তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন ; “পুত্র ! আমি সব জানি; শোক করিও না”। ইতিমধ্যে বসি, ভরতের আগমন-সংবাদ শ্রবণ করিয়া মন্ত্রিগণ সমভির্যাহারে রাজভবনে উপস্থিত হইলেন; তথায় ভরতকে রোদন করিতে দেখিয়া সাদরে বলিলেন; { অমোঘ বিক্রম জ্ঞানী রাজা দশরথ বৃদ্ধ হইয়া ছিলেন; পার্থিব সুখনিচয়ভোগ প্রচুর দক্ষিপ দিয়া অশ্বমেধ প্রভৃতি স্বজ্ঞানুষ্ঠান এবং সাক্ষাৎনারাযুণ ঐরামকে পুত্ররূপে লাভ করিয়া প্রভু-চরমে মুরলোকে মুরপতির অৰ্দ্ধাসন লাভ করিাছেন ; সেই মুক্তি-ভাজন অশোচনীয় রাজার জন্য বৃথা তুমি শোক করিতেছ। মাত্মা, অব্যয়, শুদ্ধ, এবং উৎপত্তি নাশাদিবর্জিত নিত্য; শরীর,-জড়, অতি