পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অযোধ্যাকাণ্ড । ও হর্ষে রঘুবরের সম্মুখে ধাবমান হইলেন এবং সত্বর তদীয় চরণযুগল গ্রহণ করিলেন। সুদীর্ঘ-বাহু রাম তাহাকে আকর্ষণ করিয়া বাহুযুগল দ্বারা আলিঙ্গনপূর্ব্বক নয়ন জলে অভিষিক্ত করতে লাগিলেন, আনস্তর প্রভু, তাহাকে ক্রোড়ে স্থাপন করিয়া বার বার আলিঙ্গন করতে লাগিলেন। অনন্তর, তৃষার্ত্ত গাড়ীগণ যেমন জলসমীপে গমন করে, সেইরূপ রাঘবের মাতৃ- । গণ সকলে তাহাকে দেখিতে ইচ্ছুক হইয়া সত্বর সমাগত হইল। রাম, স্বীয় জননীকে অবলোকন করিবামাত্র দ্রুত উঠিয়া তদীয় পাদবন্দনা করিলেন, অতিশয়-দুঃখিত জননীও সজলনয়নে পুত্রকে আলিঙ্গন করিয়াছিলেন এবং রঘুনন্দন, অন্যান্য মাতৃগণকেও প্রণাম করিলেন। অনস্তর মুনিপুঙ্গব বসিষ্ঠকে সমাগত দেখিয় সাষ্ট্রাঙ্গ প্রণামপূর্বক বার বার বলিলেন, “আমি ধন্য হইলাম।" ক্রমে রঘুবর, সকলকেই যথাযোগ্যরূপে উপবেশন করা: ইয়া বলিলেন ;–“পিতা আমার কুশালী কি না? এবং অতি দুঃখিত ভাবে তিনি আমাকে কি বলিয়াছেন।” বসিষ্ঠ তাহাকে বলিলেন;– “ঙ্গে রঘুনন্দন! তোমার পিতা, তোমার বিরহে সন্তগুচিন্ত হইয়া তোমাকেই চিন্তা করত “রাম রাম” “সীতা” ও “লক্ষণ” বলিতে বলিতে মৃত্যুমুখে নিপতিত হইয়াছেন । কর্ণশুল-তুল্য সেই গুরুবাক্য শ্রবণ করিবামাত্র রাম-লক্ষণ রোদন করত “হ হতোহুম্মি’ বলিয়ু পতিত হইলেন। তৎ পশ্চাং সকল মাতৃগণ এবং অন্যান্ত লোকে রোদন করিয়া উঠিল। "হা পিতঃ ! হা দয়াসাগর । আমাকে পরিত্যাগ করিয়া কোথায় গেলে ; হে মহাবাহু! আমি অনাথ হইলাম ; ইহার পর আমাকে আর পালন করিবে কে ?” ইত্যাদি বলিয়। রাম, বিলাপ করিতে লাগিলেন। সীতা ও লক্ষ্মণ, ইহা হইতে অতিরিক্ত ভাবে বিলাপ করিলেন। বসিষ্ঠ, সাস্তুনা-বাক্যে র্তাহাদিগের শোক শান্তি করিলেন। অনন্তর, তাহারা মন্দাকিনীতে গমনপুর্ব্বক স্নান করিয়া পবিত্র হইলেন। এবং সকলেই জলাভিলাষী রাজার উদ্দেশে জলদান করিলেন। লক্ষণ-সমভিব্যাহত রাম “আমাদিগের বাহ অন্ন, আমাদিগের পিতৃগণেরও তাহাই অন্ন— ইহা স্মৃতি শাস্ত্রে কথিত” এই কথা বলিয়া দুঃখে অশ্রুপূর্ণ নয়নে ইঙ্গুদী ফলের পিণ্যাক দ্বারা প্রস্তুত পিও মধুসিক্ত করিয়া পিতৃ-উদেশে দান করিলেন। অনন্তর পুনরায় স্নান করিয়া আশ্রমে প্রজ্ঞাগত হইলেন । এবং অস্তান্ত সকলে অনেকক্ষণ রোদন "> করিয়া স্নান করিল পশ্চাৎ আশ্রমে প্রতিনিবৃত্ব হইল। সেইদিনে সকলেই উপবাস করিল। অনন্তর পরদিন মন্দাকিনীর নির্ম্মল জলে স্নান করিয়া সমাগত ভরত, উপবিষ্ট ঐরামকে বলিলেন;– “হে রাম ! হে মহাভাগ রাম। আপনি আপনাকে অভিষিক্ত করান ; আপনার পৈতৃক রাজা আপনি পালন করুন ; আমার আপনি জ্যেষ্ঠ ; অতএব পিতৃতুল্য। আর দেখুন ; প্রজাপালনই ক্ষত্রিয়. দিগের ধর্ম্ম বিবিধ যজ্ঞানুষ্ঠান বংশের জন্য পুত্র উৎপাদন এবং রাজ্যে পুত্রকে প্রতিষ্ঠিত করা এই সকল কার্য্যের পর বনগমন করিবেন; এখন আপনার বনবাসের সময় নহে । আমার প্রতি প্রসন্ন হউন ; আমার যে কিছু অকার্য্য হইয়াছে, তাহ আর স্মরণ করবেন না। আমাদিগকে রক্ষা করুন।" এই বলিয়৷ ভক্তিপূর্ব্বক ভ্রাতার চরণ-যুগল মস্তকে স্থাপনপূর্বক সাক্ষাৎ রাম-সম্মুখে ভুতলে সাষ্টাঙ্গে পতিত হইলেন। রাঘব, ভরতকে অতি অনুরাগ সহকারে উঠাই৷ কোলে বসাইলেন অনন্তর; স্নেহান্দ্র-নয়নে শনৈঃ শনৈঃ বলিতে লাগিলেন;–“বৎস! শুন ; তুমি যাহা বলিলে, তাহা সত্য বটে ; কিন্তু পিতা তামাকে বলিয়া গিয়াছেন ; চতুর্দশ বৎসর দণ্ডকারণ্য বাস করিয়া পশ্চাৎ নগরে প্রবেশ করিও। এখন আমি সমগ্র রাজ্য ভরতকে দিলাম ; অতএব পিতা যে তোমাকেই রাজ্য দিয়া গিয়াছেন ;-ইহা সুব্যক্ত প্রকাশ আছে ; এবং আমাকে পিতা দণ্ডকারণ্য রাজ্য প্রদান করিয়াছেন ; অতএব তোমার ও আমার—আমাদিগের দুই জনেরই অতি যত্বে পিতৃবাক্য পালন করা কর্ত্তব্য। যে ব্যক্তি পিতৃবাক্য লঙ্গন করিয়া স্বাধীনভাবে থাকে ; সে, জীবস্মৃত ; এবং দেহাস্তে নরকগমন করে । অতএব তুমি রাজ্য শাসন কর ; আমি দণ্ডকারণ্য পালন করি. তেছি” । ভরত রামকে বলিলেন ; “মুবুদ্ধি ব্যক্তি যেমন ভ্রান্তের বাক্য গ্রহণ করেন না; সেইরূপ, পিত—কামুক স্ত্রীর বশতাপন্ন মুঢ়বুদ্ধি, ভ্রান্তচিত্ত উন্মত্ত অবস্থায় যাহাবলিবেন,তাহাও কি সত্য বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে ? রাম কহিলেন;–“পিতা, স্ত্রীবশ, কামুক, অথবা মূঢ়বৃদ্ধি হইয়া ইহা বলেন নাই। তিনি সত্যবাদী ছিলেন ; তাই ভয়ে পূর্ব্ব প্রতিজ্ঞাত বর-কৈকেয়ীকে দান করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। ভয় আর কিছুতেই নহে; মহৎ ব্যক্তিদিগের সত্যচ্যুতি ও নরক হইতেই অধিক ভয়। আর আমিও “সত্য ইহা করিব বলিয়া কৈকেয়ীর নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছি। আমি