পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q e বাল রাম সেই স্থানে বিরাজ করিতেছে। তাহার কনিষ্ঠ লক্ষ্মণও তাহার স্থায় সুন্দর, তাহার ভার্ষ্য আয়ত-লোচনা মূর্ত্তিমতী লক্ষ্মীর স্থায় সুন্দরী। দেৱলোক, গন্ধর্ব্বলোক, নাগলোক বা মনুষ্যলোকে তাদৃশী সুন্দরী রমণী আমি কখন দেখি নাই, শ্রবণও করি নাই। সে, সেই কানন আলোকিত করিয়া অবস্থান করিতেছে। হে অনঘ! আমি সেই রমণীকে তোমার ভার্য্যা করিব বলিয়া আনিতে উদ্যোগ করিলে রামের কনিষ্ঠ মহাবল লক্ষ্মণ রামের আজ্ঞায় আমার নাসিক ও কর্ণ ছেদন করিয়া দিল। আন । স্তর আমি রোদন করিতে করিতে খরের নিকট গমন । করিলাম। রাক্ষস সেনাপতিগণ সমভিব্যাহারে খরও রামের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল। কিয়ৎক্ষণ পরেই সেই সমস্ত ষ্টীমপরাক্রম রাক্ষসগণ সেই বলশালী রাম কর্তৃক গণমধ্যে নিহতু হইয়াছে। প্রভো! আমার বোধ হয়, রাম মনুে করিলে নিমিষাৰ্দ্ধে ত্রৈলোক্য ভস্মাবশেষ করিতে পারে, সন্দেহ নাই। যদি রামের ভার্য্যা তোমার প্রণয়িণী হয়, তবেই তোমার জীবন সফল ; অতএব হে রাজেন্দ্র ! পদ্মপত্র-লোচনা, সর্ব্বলোক-সুন্দরী সীতা যাহাতে তোমার প্রেয়সী হয়, তাহার চেষ্টা কর। প্রভো! তুমি রামের সাক্ষাতে অবস্থান করিতে পরিবে না। মায়াজালে রামকে মোহিত করিয়া তোমাকে জানকী লাভ করিতে হইবে।” রাবণ তাহা শ্রবণ করিয়া মধুর বাক্য, সম্মান ও দানদ্বারা ভগিনীকে সমাশ্বস্ত করিয়া শয়নাগারে গমন করিল। তথায় কর্ত্তব্য চিন্তা করিতে করিতে রাত্রিকালে নিদ্রাসুখ অনুভব করিতে পারিল না। “রাম একাকী সামান্ত মনুষ্য হইয়াও আমার ভ্রাতা খরকে কিরূপে সসৈন্তে বিনাশ করিল অথবা রাম মনুষ্য নহেন, আমাকে বিনাশ করিবার জন্য ব্রহ্মাকর্তৃক প্রার্থিত হইয়া মনুষ্যরূপে রঘুবংশে জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন। যদি পরমাত্মা রায় আমাকে বিনাশ করেন, তবে চিরকালের নিমিত্ত বৈকুণ্ঠ রাজ্য পরিপালন করিব অর্থাৎ সাযুজ্য রূপ মোক্ষ প্রাপ্ত হইব। নতুবা চিরকাল এই রাক্ষস রাজ্যভোগ করিব। জতএব বিরোধ বুদ্ধিতেই রামের নিকট গমন করি।” রক্ষত্রে রাবণ এই রূপ চিন্তা করিয়া রামকে জগদীশ্বর বলিয়া স্থির করিল। আরও ভাবিল, তাহার নিকট বিরোধ-বুদ্ধিতেই গমন করা উচিত। যেহেতু জগদীশ্বর ভক্তিতে শীঘ্র প্রসন্ন হন না। । অরণ্য-কাণ্ডে পঞ্চম অধ্যায় সমাপ্ত । অধ্যাত্ম-রামায়ণ । ষষ্ঠ অধ্যায়। । বুদ্ধিমামৃ রাবণ, নিশাভাগে ঐরুপ চিন্তা করিয়া মনে মনে একটী কার্য্য স্থির করিল ; অনন্তর প্রভাতে রথারোহণ পূর্ব্বক সমুদ্রের পরপারে মারীচ সদনে গমন করিল। মাৰীচ, তথায় মুনির স্থায় জটা-বহুল ধারী হইয়া নিগুণ গুণভাসক পরমাত্মাকে হৃদয়ে ধ্যান করিতেছিল। তাহার পর সমাধি-বিরামে রাবণকে নিজগৃহে সমাগত অবলোকন করিল ; এবং তৎক্ষণাং গাত্রোখানপুর্ব্বক রাবণকে আলিঙ্গন, যথাবিধি পূজা ও আতিথ্য সৎকার করিল। অনস্তর রাবণ সুখে উপবেশন করিলে মারীচ কহিল ;–“রাবণ ! আপনি একমাত্র রথে আরোহণ করিয়া ত্যাগমন করিয়াছেন ও হৃদয়ে যেন কোন মহৎ কার্য্যের চিস্তা করিতেছেন। গোপনীয় না হইলে তাহা প্রকাশ করুন | হে রাজেন্দ্র । যদি ঐ কার্য্য করিলে আমাকে পাপম্পৰ্শ না করে ও ঐ কার্য্য যদি ন্যায়সঙ্গত হয় ; তবে আমি আপনার প্রিয় কার্য্য সম্পাদন করিব । রাবণ কহিল, "অযোধ্যাধিপতি দশরথ নামে রাজা ছিলেন। সত্য পরাক্রম রাম তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র। রাজা সেই মুনিপ্রিয় রামকে ভার্য্যা ও ভ্রাতা-লক্ষ্মণের সহিত নিৰ্বাসিত করিয়াছেন, রাম ঘোর পঞ্চবটী বনে আশ্রম করিয়া অবস্থান করিতেছে। ভুবন-মোহিনী বিশাল-নয়ন সীতা তাহার ভার্য্যা ; রাম, নিরপরাধে আমার অনুচর ভীম-পরাক্রম রাক্ষসগণ ও খরকে বিনাশ পূর্ব্বক নির্ভয় হইয়া সুখে বাস করিতেছে, আমার ভগিনী শূৰ্পণখা তাহার কোন অপকার করে নাই, তথাপি কুরাত্ম রাম তাহার নাসিক ও কর্ণচ্ছেদ করিয়া নির্ভয়ে অবস্থান করিতেছে। অতএব তুমি আমার সহায় হইলে আমি গমন বরিয়া ষে সময় রাম বনে না থাকিবে, সেই সময় তাহার প্রাণবল্লভ সীতাকে হরণ করিয়া আনয়ন করিব । তুমি মায়াময় মৃগ হইয়া রাম ও লক্ষ্মণকে আশ্রম হইতে দূরে লইয়া যাইলে আমি সীতাকে হরণ করিব। তুমি আমার সাহায্য করিয়া পূর্ব্ববং অবস্থান করবে।” রাবণ এই কথা কহিতেছে দেখিয়া মারীচ সবিস্ময়ে বলিল;—“এই সর্ব্বনাশকর বাক্য কে তোমাকে উপদেশ দিয়াছে ? বে ব্যক্তি এইরূপে তোমার বিনাশ কামনা করিতেছে, সেই তোমার শক্র, সুতরাং বখাৰ্ছ। হে রাবণ? আমার চিত্র বামের পুরুকার স্মৰণ করিয়া অদ্যপি রক্ষার নিমিত্ত তপোবনে গমন করিয়া একবাণে