পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরণ্য-কাণ্ড । এইরূপ দুর্ব্বাক্য বলিতেছ,তোমাকে ধিক্ ! বোধ করি তোমার ঈদৃশ বুদ্ধিভ্রংশ কোন অনিষ্টপাতের হেতু হইবে” । এই কথা বলিয়া বন-দেবতাগণের নিকট সীতাকে সমর্পণ করিয়া অতিশয় দুঃখিতান্তঃকরণে অল্পে অঙ্গে রাম সমীপে গমন করিলেন । অনস্তুর অবসর পাইয়া রাবণ দণ্ড-কমণ্ডলু ধারণপূর্ব্বক ভিক্ষুবেশে সীতার নিকট উপস্থিত হইলেন। সীত৷ ভিক্ষুককে সমাগত দেখিয়া ভক্তিভাবে প্রণাম ও পূজা করিয়া কন্দ-মুল-ফলাদি প্রদানানন্তর স্বাগত জিজ্ঞাসা করিলেন, আর কহিলেন;–“হে মুনে! আপনি এই ফলাদি ভোজন করুন ; ও যদি ইচ্ছ হয়, তবে এই স্থানে সুখে বিশ্রাম করুন; শীঘ্রই আমার স্বামী আগমনপূর্বক আপনার বিশেষ প্রিয় সম্পাদন করিবেন, এক্ষণে যদ্যপি আপনার অভিরুচি হয়, তবে এই স্থানে অবস্থান করুন।” ভিক্ষুক কহিল; —“হে কমল-দল-লোচনে ! তুমি কে ? তোমার বা কে ? হে অনত্বে ! কি জন্য তোমরা এই রাক্ষসসক্ষুল কাননে বাস করিতেছ। হে ভদ্রে । এই সকল আত্ম বৃত্তান্ত সবিস্তারে বর্ণন কর।” সীতা কহিলেন ;–“আমি অযোধ্যাধিপতি শ্রীমান্‌ মহারাজা দশরথের জ্যেষ্ঠপুত্র সর্ব্বগুণাকর রামচন্দ্রের সহধর্ম্মিণী—জনক-রাজ-দুহিতা—নাম সীতা, আমার সহিত রামচন্দ্র ও র্তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষ্মণ পিতার আদেশে দণ্ডকারণ্যে চতুর্দশ বৎসর বাস করিতে আসিয়াছেন । আপনি কে ? জানিতে আমার অতিমাত্র ইচ্ছা হইয়াছে, অতএব আপনার পরি চয় প্রদান করুন।” * ভিক্ষুক কহিল;—“আমি পৌলস্ত্য-তনয় রাক্ষসেশ্বর রাবণ—তোমার সৌন্দর্ঘ্যে বিমুগ্ধ হইয় তোমাকে নিজ নগরে লইবার জন্য আসিয়াছি । মুনিবেশধারী রামকে লইয়৷ তুমি কি করিবে ? তুমি আমাকে ভজন করিয়া আমার সহিত বিষয়সকল ভোগ কর । বনবাস নিতান্ত ক্লেশকর; অতএব তাহ পরিত্যাগ কর। সীতা ভিক্ষুর বাক্য শুনিয়া অতিশয় ভীত হইলেন এবং কহিলেন;–“তুমি যখন আমাকে এইরূপ কুবাক্য কহি, তেছ, তখন রাম তোমাকে অবগুই বিনাশ করবেন। তুমি ক্ষণকাল অপেক্ষা কর, রাম লক্ষ্মণের সহিত সত্বর আগমন করিবেন । তুমি মনে করিও' না যে, আমার প্রতি বল প্রকাশ করিবে । সিংহের ভার্য্যার প্রতি সামান্ত পশু কখনই অত্যাচার করিতে সক্ষম হয় না। তুমি রামবাণে বিভিন্ন হইয়া মহীতলে পতিত হইবে।” রাবণ সীতার কথা শুনিয়া ক্রোধে অধীর হইল এবং ཨཁལ་༑ ལྟར་བཟང་ বদন ও বিংশতি Q○ বাহু শোভিত কালমেঘ-সদৃশ-কাস্তি-যুক্ত স্বীয় দেহ সীতাকে দেখাইল। রাবণের সেই করালমুত্তি দেখিয়া বনদেবতা ও বনস্থ প্রাণিসকল সস্ত্রস্ত হইল। ভয়ানক মূর্ত্তি রাবণ নখস্বারা মৃত্তিক বিদীর্ণ করিয়া সেই মৃত্তিকার সহিত সীতাকে বাহুদ্বারা উত্তোলনপুর্ব্বক রথে নিক্ষেপ করিয়া শীঘ্র গগনমার্গে গমন করিতে অরস্ত করিল। জনকতনয়। সীতা ভয়ে একাত্ত অধীর ও দীন হইয়৷ পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিতে করিতে, “হ রাম ! হা লক্ষ্মণ !" বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন । সীতার সৃদয়বিদারক ক্রন্দন-ধ্বনি শ্রবণ করিয়া পর্ব্বত হইতে তীক্ষতুগু পক্ষীন্দ্র জটায়ু শীঘ্র উপস্থত হইল—“অরে পামর ! থাক্, থাকৃ, আমার সম্মুখে শূন্ত বন হইতে রামচন্ত্রের ভার্য্যা অপহরণ করিয়া কে গমন করিতে পারে ? কুকুর কি কখন মন্ত্রপুত মঞ্জীয় পুরোডাশ ভোজন করিতে সক্ষম হয়?” এই বলিয়া তীক্ষু চঞ্চু দ্বারা রাবণের রথ চুর্ণ করিঙ্গ এবং চরণ-প্রহারে অশ্ব ও ধনু বিভিন্ন করিয়া দিল। তখন রাবণ ক্রুদ্ধ হইয়। সীতাকে পরিত্যাগপুর্ব্বক খড়গ দ্বারা জটায়ুর পদদ্বয় ছেদন করিয়৷ দিল । পক্ষীন্দ্র আহত হইয়া পতিত হইল, কিন্তু তাহার প্রাণ বহির্গত হইল না। রাবণ সীতাকে লইয়। অন্য রথে আরোহণপূর্বক গমন করিতে লাগিল । সীত “রাম রাম" বলিয় বারংবার রোদন করিতে লাগিলেন। সে সময় তিনি কাহাকেও রক্ষক পাইলেন না । হা রাম ! হা জগন্নাথ ! আমি নিতান্ত দুঃখিত, আপনি কিছুই দেখিতে পাইতেছেন না ; আপনার ভার্য্যাকে রাক্ষস হরণ করিতেছে, শীঘ্র মোচন করুন, হ! লক্ষণ মহাভাগ! চামাকে মোচন কর, আমি তোমাকে বাকৃ-শরে বিদ্ধ করিয়াছি, হে দেবর! তুমি তাহা ক্ষমা কর । সীতা এইরূপে বিলাপ ও পরিতাপ করিতে লাগিলেন । রাবণ ঐরামের ভাগযনাশঙ্গায় সীতাকে গ্রহণ করিয়া অতিসত্বর বায়ুবেগে আকাশমার্গে গমন করিতে লাগিল। জানকী অধোমুখী হইয়া দেখিলেন একটি পর্ব্বতের শিখরভাগে পাঁচটা বানর অবস্থান করিতেছে । সীতা আভরণ উন্মোচন করিয়া স্বীয় উত্তরীয়াদ্ধে বদ্ধ করিয়, “রামকে আমার বৃত্তাস্ত বলিও”, এই অভিপ্রায়ে পর্ব্বতোপরি তাহ। নিক্ষেপ করিলেন । অনন্তর রাবণ সমুদ্র উল্লক্ষনপূর্বক লঙ্কায় গমন করিয়৷ ষ্ট্ৰীয় অন্তঃপুৰ্ববর্ত্ত নির্জন অশোক কাননে সীতাকে রক্ষা করিল ; এবং রাক্ষসীগণকে তাহার