পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লঙ্কাকাণ্ড । সাক্ষাৎ সর্ব্বসংহারক কাল, রামরূপে দশরথ গৃহে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন; এবং সেই কালশক্তি, সীতা নামে জনকনন্দিনীরূপে উৎপন্ন হইয়াছেন; তাহার উভয়েই ভূভারহরণের জন্য এখানে উপস্থিত। তুমি তৎকর্তৃক পরিচালিত হইয়াই আমার হিত উপদেশ শ্রবণ করিতেছ না। শ্রীরাম প্রকৃতি সাক্ষ্মী এবং প্রকৃতির পরবর্তী ; তিনি সর্ব্বভূতের অস্তরে বাহিরে । অবস্থিত ও সমদশী ; নামরূপ ইত্যাদি ভেদে তিনিই সেই-সেই-বস্তু-স্বরূপ; ভেদাতিরিক্ত কোন পদার্থ নাই। তিনি নির্ম্মল ; যেমন এক প্রচণ্ড অনলই নানাবিধ বৃক্ষ দগ্ধ করত সেই সেই বৃক্ষের । আকার ভেদবশতঃ অজ্ঞানী ব্যক্তিদিগের নিকট ভিন্ন ভিন্ন বলিয়া প্রতীয়মান হয়, সেইরূপ তিনিও পঞ্চকোষ (অন্নময় কোষ প্রাণময় কোষ ইত্যাদি ) প্রভৃতি ভেদে সেই স্ট্রে কোষাদিরূপে ভিন্ন ভিন্ন বলিয়া প্রতিভাত হন। বিশুদ্ধ স্ফটিক যেমন নীলপীত প্রভূতি বস্ত সাহায্যে সেই সেই বর্ণক্রান্ত বলিয়া বোধ হয়, সেইরূপ তিনি নিত্যমুক্ত হইলেও নিজমায়াগুণে প্রতিবিম্বিত হইয়া কাল, প্রধান, পুরুষ এবং অব্যক্ত এই চাররূপে প্রতীত হন । । সেই অজ, প্রধান ও পুরুষরূপে ( রজোগুণ প্রতিবিম্বরূপে ) সমস্ত জগৎ স্বষ্টি করেন ; সেই অবিনাশী, কালরূপে ( তমোগুণ-প্রতিবিম্বরূপে ) জগৎসংহার করেন ; অব্যক্তরূপে জগৎপালন করেন ; (অব্যক্ত সত্ত্ব-গুণ-প্রতিবিম্ব ) সেই দেব ভগবান, ব্রহ্মার প্রার্থনামতে মায়া-গৃহীত রামরূপে কালরূপী হইয়৷ তোমার বধের নিমিত্ত এখানে আসিতেছেন। ঈশ্বর সত্য-সংকল্প ; তাহার সে সংকল্প লোকে কিরূপে অন্যথা করিবে ? রাম, তোমাকে পুত্র, সৈন্য এবং বাহনের সহিত বিনাশ করবেন। রাবণ ! এবং নিখিল রাক্ষস-কুলকে রামের হস্তে নিহত হইতে দেখিতে পারিব না; অতএব তোমাদিগের প্রতি আত্মীয় জ্ঞান দূর করি, আমি রাঘব সন্নিধানে গমন করি। আমি যাইলে তুমি মুখী হইয়া চির দিন নিজ ভবনে বিহার কর।” বিভীষণ রাবণের বাক্যে ক্ষণকাল মধ্যে পরিজন এবং গৃহ প্রভৃতি সমস্ত বস্তু পরিত্যাগপূর্ব্বক—ীরামচত্রের পাদপদ্ম সেবনে অভিলাষী হইয়া রামসমীপে প্রস্থান করিল। এতদিনে তাহার মনোরথ পূর্ণ হইল। । দ্বিতীয় অধ্যায় সমাপ্ত । న(t তৃতীয় অধ্যায়। মহাভাগ বিভীষণ মন্ত্রি-চতুষ্টয়ের সহিত রামচত্রের সম্মুখবর্তী গগণ-প্রাঙ্গণে আসিয়া দাড়াইয় উচ্চেঃস্বরে বলিতে লাগিল;-“হে স্থামিন। কমল লোচন! রাম ; আমি আপনার ভার্যাপহারী দশাননের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ; আমার নাম বিভীষণ ; আত্মীয়জ্ঞান থাকিতে আমি তোমাকে । ভ্রাতা রাবণ আমাকে তাড়াইয়া দিয়াছে; আমি আপনারই শরণাপন্ন হইলাম ; দেব ! বিদেহ-নন্দিনী সীতাকে রামের নিকট পঠাইয়া দেও',এই হিত-কথা সেই অনাত্মজ্ঞকে বারংবার বলিয়ছিলাম, বলিলেও সেই কাল-পাশ বশবর্তী রাক্ষসাধয় তাহ শুনিল না। প্রত্যু ১ খড়গ লইয়া আমাকে বধ করিতে ধাবমান হইল। অনস্তর বুঝলাম, সংসার মোচন না হইলে ভয় মোচন হয় না। তাই প্রভু হে! নির্ভয় হইতে অভিলাষী হইয়া সংসার মোচনের জন্য, অবিলম্বে আমি চারজন মন্ত্রীর সহিষ্ক"তথা হইতে আসিয়া আপনার শরণ লইলাম”। বিভীষণের বাক্য শ্রবণ করিয়া সুগ্রীব বলিতে লাগিল;—“রাম ! মায়াবী অধম রাক্ষস জাতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আপনার অনুচিত ; বিশেষতঃ এ ব্যক্তি সীতাপ, হারক রাবণের কনিষ্ঠ ; বলবান এবং অস্থধারী মন্ত্রিগণে পরিবৃত। ছিদ্র পাইলেই আমাদিগকে নিহত করিবে । অতএব দেব ! আমার প্রতি অনুমতি করুন; বানরেরা ইহাকে বধ করিয়া ফেলুক, আমার ত এই রকম বোধ হইতেছে, রাম ! তোমার বুদ্ধিতে কিরূপ ধরিতেছে বল"। সুগ্রীবের বাক্য শুনিয়া রামচন্দ্র ঈষৎ হান্ত করত কহিলেন ;—“হে বানরশ্রেষ্ঠ। যদি ইচ্ছা করি, তাহা হইলে অধিপত্তি সমেত সমস্ত লোককে অৰ্দ্ধ নিমিষের মধ্যে সংহার করিতে পারি এবং অৰ্দ্ধনিমিষের মধ্যে স্বজন করিতে পারি। অতএব আমি ঐ রাক্ষসকে অভয়দান করিলাম, শীঘ্র নিকটে অনিয়ন কর। সর্ব্বভূতের মধ্যে একবার মাত্র যে আমি তোমার’ এই বলিয়া আমার অধীন হইয়া অভয় যাচ এণ করে ; আমি তাহাকে অভয়দান করি, আমার ব্রতই এই।” সুগ্রীব রামের বাক্য শ্রবণ করিয়া সৃষ্টচিত্তে বিভীষণকে আনাইয়া রামদর্শন করাইল। অনন্তর বিভীষণ রঘুবরকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া খামবর্ণ, বিশাললোচন, প্রসন্ন-মুখ-কমল, ধনুর্ব্বাণধারী, শাস্তস্বভাব এবং লক্ষ্মণের সহিত অবস্থিত ঐরামকে পরম ভক্তিসহকারে কৃতাঞ্জলিপুটে স্তব করিতে লাগিল। তৎকালে আনন্দ-বাপে তাহার কণ্ঠস্বর