পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০৬ লাগিল । অনন্তর হনুমান দেখিল, একটা মকরী তাহাকে গ্রাস করিতেছে ; তখনই ক্রোধে দুই হস্তে তাহার মুখ ধরিয়া দ্বিখণ্ড করিয়া ফেলিল; তাহাতে মকর প্রাণত্যাগ করিল। তাহার পরেই দেখাগেল—শুন্যমার্গে একজন দিব্যরূপ-ধারিণী রমণী ; ধান্তমালী নামে বিখ্যাত সেই অপর হনুমানুকে বলিতে লাগিল;—“হে বানরশ্রেষ্ঠ ! তোমার প্রসাদে আমি শাপধিমুক্ত হইলাম ; আমি অঙ্গরা; একজন মুনি কোন কারণে আমাকে অভিসম্পাত করেন, তাহাতেই আমি মকরী হইয়াছিলাম। হে অনঘ! আশ্রমে যাহাকে দেখিয়া আসিলে, পথে তোমার বিস্তু করিবার জন্তু রাবণ উহাকে পাঠাইয়াছে; ঐ মহাসুরের নাম কালনেমি; ঐ ব্যক্তি ব্রহ্মহিংসক;—মুনি নহে; মুনিবেশধারী মাত্র; দুষ্টকে বধ কর ; শাস্ত্র সর্ব্বোত্তম দ্রোণপর্ব্বতে গমন কর । আমি তোমার স্পর্শে টুিপাপ হইয়াছি; এক্ষণে ব্রহ্মলোকে চলিলাম “এই বলিয়। অপর ব্রহ্মলোকে গমন করিল। হনুমনৃও আশ্রমে প্রত্যাগত হইল। হনুমানকে আগত দেখিয়া কালনেমি বলিল ;– “বানরাশ্রষ্ঠ ! তোমার এত বিলম্ব হইল কেন ? ( যাহ হউক এক্ষণে ) আমার নিকট মন্ত্র গ্রহণ কর, করিয়া) আমাকে গুরুদক্ষিণ দেও;" এই কথা বলিলে, হনুমান দৃঢ়তর মুষ্টিবন্ধন করিয়া রাক্ষসকে কহিল,"এই দক্ষিণ গ্রহণ কর” বলিয় তাহাকে আঘাত করিল। অনন্তর মহামুর কালনেমি, মুনিবেশ পরিত্যাগ করিয়া নানাবিধ মায় প্রকাশ পূর্ব্বক বায়ুনন্দনের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল। মহামায়িক শীরামের দূত এবং মায়াবী রাক্ষসগণের শত্রু হনুমান তাহার মস্তকে মুষ্ট্যাঘাত করিল, তাহাতে কালনেমি ভগ্ন-মস্তক হইয়া প্রাণত্যাগ করিল। অনন্তর; ক্ষীরসমুদ্রে গমন করিয়া দ্রোণ নামক মহাপর্ব্বত দর্শন করিল। হনুমান,কিন্তু তাহাতে ওষধিসকল দেখিতে না পাইয়া সত্বর পর্বত উৎপাটন করিয়া গ্রহণ করিল। পরে হনুমান বায়ুবেগে রামসমীপে গমন করিয়া ঐরামকে কহিল, “আমি এই মহাগিরি লইয়া আসিয়াছি ; হে দেবেশ! এক্ষণে যাহা উচিত হয় তাহ করুন ; আর বিলম্ব করা উচিত নহে।” মহামতি রাম হনুমানের বাক্য শ্রবণপূর্ব্বক সন্তুষ্ট চিত্তে সত্বর ওষধিসকল সংগ্রহ করিয়া সুষেণ দ্বারা মহাত্মা লক্ষ্মণের চিকৎসা করাইলেন। অনন্তর লক্ষ্মণ মোহ পরিত্যাগ করিয়া স্বপ্তোধিতের ন্যায় বলিতে লাগিলেন, “রে দশানন । থাক্, থাকৃ; কোথায় যাইবি । এখনই আমি তোকে অধ্যাত্ম-রামায়ণ । বধ করিব।” ঐরাম লক্ষ্মণকে এই কথা বলিতে দেখিয়া তাহার মস্তকাস্ত্রাণ করিলেন এবং হনুমানকে বলিলেন;–“বৎস! মহাকপি! অদ্য তোমার প্রসাদেই আমার ভ্রাতা লক্ষ্মণকে সুস্থ দেখিতে পাই, লাম।” এই বলিয়া বিভীষণের মতে বানরগণের সহিত সুগ্রীব সমভিব্যাহারে যুদ্ধের জন্য উদ্যোগী হইলেন : যুদ্ধাভিলাষী সকল বানরগণ-পাষাণ, বনস্পতি, ও পর্ব্বত শৃঙ্গ গ্রহণ করিয়া যুদ্ধের জন্ত শত্রুদিগের সম্মুখীন হইতে গমন করিল। মহাসুর রাবণ রামবাণে বিদ্ধ হইয়া সতিশয় ব্যথিত হইয়াছিল । সিংহের নিকট হস্তী বা গরুড়ের নিকট বিষধরের স্তায় রাজা রাবণ মহাত্ম রাঘধের নিকট পরাভূত হইং গৃহে গমন করিল ; তথায় সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়ারাক্ষসগণকে এই কথা বলিল –“মনুষ্য-হস্তেই আমার মৃত্যু হইবে, ইহা ব্রহ্মা পূর্ব্বে স্থির করিয় দিয়াছেন ; আমাকে বধ করিতে পারে ; এমন মনুষ্য পৃথিবীতে কেহ নাই। অতএব সাক্ষাং নারায়ণ, দশরথনন্দন রামরূপে মনুষ্য হইয়াছেন সন্দেহ নাই; তিনি আমাকে বধ করিবার জন্ত লঙ্কায় উপস্থিত। হে রাক্ষসশ্রেষ্ঠগণ! পূর্ব্বে অনরণ্য তামাকে শাপ দিয়াছিলেন “আমার বংশে সনাতন পরমাত্মা উৎপন্ন হইবেন ; তিনি তোমাকে পুত্র, পৌত্র ও বান্ধবগণের সহিত বধ করিবেন ; সন্দেহ নাই।" এই বলিয়া অনরণ্য স্বর্গে গমন করেন। সেই পরমাত্মাই আমার বধের জন্য রামরূপে অবতীর্ণ হইয়াছেন, আমাকে বধ করিবেনই। মূঢ়-স্বভাব কুম্ভকর্ণ সর্ব্বদা নিদ্রার বশবর্ত্তী ; সেই মহাবলকে জাগরিত করিয়া আমার নিকট লইয়। আইস ;" এই কথা বলিলে সেই সকল মহাকায় রাক্ষসগণ, সত্বর গিয়া যত্নসহকারে কুত্ত্বকর্ণকে জাগরিত করিয়া রাবণ সন্নিধানে আনয়ন করিল। কুম্ভকর্ণ, রাজাকে প্রণাম করিয়া আসনের উপর উপবিষ্ট হইল। রাজা রাবণ, কাতরবচনে তাহাকে বলিতে লাগিল ;–“কুম্ভকর্ণ । ভাই ! শুন তুমি ; বড়ই কষ্ট উপস্থিত হইয়াছে; রাম ত পরাক্রান্ত পুত্র, পৌত্র ও বান্ধবগণকে নিহত করিল ; মৃত্যুকাল উপস্থিত ; এক্ষণে কর্ত্তব্য কি ? এই বলশালী দাশরথি রাম, সুগ্রীব সমভিব্যাহারে সসৈন্তে সমুদ্র পার হইয়া আমাদিগের মূলচ্ছেদন করিতেছে। যে সকল রাক্ষস প্রধান প্রধান ছিল ; বানরগণ তাহাদিগকে যুদ্ধে নিহত করিয়াছে; কিন্তু এই যুদ্ধে কদাচ বানরগণের ক্ষয় দেখিতে পাইতেছি না। হে মহাবল ! উহাদিগকে বিনষ্ট কর, ষে জগু তোমাকে জাগরিত করা গেল ; হে মহাবল ।