পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২২ অঙ্গদকে এবং বিভীষণকে বলিলেন;–“সকল বানরগণের সহিত তোমরা আমার মিত্রোচিত কার্য্য করিয়াছ ; এখন তোমাদিগের সকলকে অনুমতি দিতেছি, স্ব স্ব ইচ্ছানুসারে যথাস্থানে গমন করিতে পার । সুগ্রীব ! তুমি সকল বানর-সৈন্সের সহিত অবিলম্বে কিষ্কিন্ধ্যা নগরে প্রতিগমন কর । বিভীষণ ! তুমি আমার ভক্ত ;–নিজ রাজ্য লঙ্কাতে বাস কর । ইন্দ্র সমেত দেবগগণও তোমাকে অপমানিত করিতে পারবেন না। আমি এক্ষণে আমার পিতৃ-রাজধানী অযোধ্যা নগরে গমন করিতে ইচ্ছা করি"। সেই সমস্ত মহাবল বানঃ এবং রাক্ষস-বিভীষণ ত্রীরাম কর্তৃক এইরূপ কথিত হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে বলিতে লাগিল –"হে রঘু বর। আপনার সহিত আমরাও অযোধ্যা নগরে গমন করিতে ইচ্ছা করি ; আপনাকে অভিষিক্ত দেখিয়া এবং কৌসল্যাৰুে অভিবাদন করিয়া পরে নিজ নিজ রাজ্য গ্রহণ করিব ; প্রভু হে! অমুমতি কর"। ঐরাম, “তথাস্তু" বলিয়া সুগ্রীব ! তুমি—বানর সকল, বিভীষণ ও হনুমানের সহিত এখন শীঘ্র পুষ্পকে আরোহণ কর" বলিলেন । অনস্তর, সেনা-সহ সুগ্রীৰ, মন্ত্রি সহ বিভীষণ—সক. লেই সত্বর পুষ্পকে আরোহণ করিল। তাহার সকলে আরূঢ় হইলে কুবেরের পরম আসন পুষ্পক রাখবের অনুমতি প্রাপ্তিমাত্র গগণপথে উখিত হইল। তখন হষ্টচিত্ত শ্রীরাম, সেই হংসযুক্ত ভাস্বর বিমানে আরূঢ় হইয়। দ্বিতীয় চতুমুখের স্থায় বিরাজ করিতে লাগিলেন। অনস্তর, সেই স্বর্য্যমুণ্ডল সদৃশ তপোলব্ধ কুবের-যান, সীতা-সমেত সমুজ রামের আরোহণে অতিশয় শোভা পাইল । ত্রয়োদশ অধ্যায় সমাপ্ত । চতুর্দশ অধ্যায়। অনন্তর রঘুনন্দন রাম, সর্ব্বত্র দৃষ্টি সঞ্চারণ করিয়া চন্দ্রমুখী মৈথিলী সীতাকে বলিতে লাগলেন, ত্রিকুট শিখরে অগ্রভাগে অবস্থিতু মহাপ্রভ লঙ্কা নগর দর্শন কর ; মাংস-কৰ্দম-পঙ্কিল এই রণক্ষেত্র অবলোকন কর । এইস্থানে রাক্ষস ও বানরদিগের বিষম হত্যকাগু হইয়া গিয়াছে ; রাক্ষসরাজ রাবণ, আমার হস্তে নিহত হইয়া এখানে শয়ন করিয়া আছে। এখানে কুম্ভকর্ণ ইস্রজিৎ প্রভৃতি সকল রাক্ষসেরাই আমাদিগের হস্তে নিপতিত হইয়াছে। জলাশয় সাগরে এই সেতু আমি বন্ধন করিয়াছি। অধ্যাক্স-রামায়ণ । মহাত্মা সাগরের ত্রিলোক-পূজিত সেতুবন্ধ নামে বিখ্যাত এই তীর্থ দৃষ্টিগোচর হইতেছে। ইহা পরম পবিত্র এবং দর্শনমাত্রে পাপনাশক । এখানে আমি রামেশ্বর নামে দেবদেব শিব প্রতিষ্ঠা করিয়াছি। এইখানেই বিভীষণ মন্ত্রিগণ সমভিব্যাহারে আমার শরণাপন্ন হন । এই বিচিত্র-বন-শালিনী মুগ্রীবনগরী কিষ্কিন্ধ্যা।” সেখানে সুগ্রীব সীতার প্রিয়কামনায় রামের আজ্ঞাক্রমে তার প্রমুখ বানর-রমণীগণকে আনয়ন করাইল । বিমান, সেই সকল রমণীগণকে লইয়া সত্বর উখিত হইল দেখিয়া রাঘব, সীতাকে বলিলেন ;—“দেখ এই ঋষ্যমূক পর্ব্বত। ঐখানে —আমি বালীকে নিহত করি ; যেখানে আমি বহুতর রাক্ষস সংহার করি, সেই পঞ্চবটী বন এই ৷ অগস্ত্য ও সুতীক্ষের বিশুদ্ধ আশ্রম স্থান এই ৷ হে বরবর্ণিনি ! সেই সকল তাপসগণ এই যে দৃষ্টিগোচর হইতেছেন। দেবি ! ঐ পর্ব্বত শ্রেষ্ঠ চিত্রকুট, এই শোভা পাইতেছে। কৈকেয়ীনন্দন ভরত, আমাকে প্রসন্ন করিবার জন্য এই স্থানে আসিয়াছিলেন । ভরদ্বাজের আশ্রম অবলোকন কর—ঐ যে যমুনাতীর দেখা যাইতেছে। গীতে! লোকপাবনী ভাগীরথ গঙ্গা ঐ দৃষ্টিগোচর হইতেছেন : যুপ-মালা ভূষিত সেই সরযুনদী ঐ দেখা যাইতেছে। ঐ সেই অযোধ্যা-নগরী নয়নগোচর হইতেছেন : হে ভামিনি । প্রণাম কর। নারায়ণ রঘুনন্দন রাম, ক্রমে ঐরূপ বলিতে বলিতে পূর্ণ চতুর্দশ বৎসরে পঞ্চমী তিথিতে ভরদ্বাজ-আশ্রমে উপস্থিত হইলেন । ভ্রাতা ও ভার্য্যা সমন্বিত প্রভু রাম, ভরদ্বাজ মুনিকে অবলোকন করিয়া বন্দনা করিলেন । তথায় আসীন মুনিকে সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন – “শুনিতে পান,-সানুজ ভরত, কুশলে আছেন ত ? অযোধ্যাপ্রদেশ দুর্ভিক্ষ-পীড়িত নহে ত ? মাতৃগণ জীবিত আছেন ত ?” রামের কথা শুনিয়া ভরদ্বাজ জষ্টচিত্তে বলিলেন;–“সকলেরই মঙ্গল ; মহামনা ভরত, ফলমূলভোজী ও জটা-বন্ধলধারী হইয়া তোমার পাদুকাযুগলে সকল রাজ্যভার অপর্ণপূর্বক তোমার প্রতীক্ষা করিতেছেন। হে রঘুনন্দন ! তুমি দণ্ডকারণ্যে যাহা যাহা করিয়াছ; এবং সীতাহরণের পর তোমার সহিত রাক্ষসগণের বিনাশজনক যুদ্ধ—হে রাম ! তোমার প্রসাদে তপস্যা প্রভাবে তৎসমস্তই জ্ঞাত আছি । তুমি সাক্ষাৎ পরম ব্রহ্ম ; তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত নাই; তুমি, ভূত স্বজন করিবার উদ্যোগে প্রথমে জল স্বষ্টি করিয়া তাহাতে সুপ্ত ছিলে, সেই