পাতা:অধ্যাত্ম-রামায়ণম্‌ - পঞ্চানন তর্করত্ন.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২8 f যাহার জগু শোক করিতেছেন, তিনি আপনাকে মঙ্গল-সংবাদ দিয়াছেন। হে দেব ! আমি আপ নার প্রিয় কথা বলিতেছি, মুদারুণ শোক পরিত্যাগ । করুন, অতি শীঘ্রই আপনি ভ্রাতা রামের সহিত মিলিত হইবেন । ঐরাম, রাবণকে যুদ্ধে নিহত করিয়া সীতা উদ্ধার করিয়াছেন ; এখন কৃতকার্য্য হইয়া সীতাও লক্ষ্মণের সহিত এখানে উপস্থিত হইতেছেন।" এইরূপ কথিত হইলে কৈকেয়ীর প্রিয় পুল মহাতেজা ভরত, হর্ষাবেগে মূচ্ছি তপ্রায় হই লেন, আনন্দে তা প্রকৃতিস্থ হইয়। ভূতলে পতিত হইলেন। অনন্তর, ভরত প্রিয়বাদী বানর গবন ভিষিক্ত করিতে লাগিলেন; বলিলেন, “তুমি দেনই । হও, আর মনুষ্যই হও, দয়া করিয়া এখানে অসিরছি | হে সৌম্য ! তোমার এই প্রিয় সংবাদ প্রদানের পারিতোষিক—শত সহস্ৰ গো, উৎকৃষ্ট এক শত গ্রাম এবং সর্ব্বালঙ্গার ভূষিত ষোল জন সুন্দরী কন্যা দান করিতেছি ;" এই বলিয়া ভরত, পবনতনয়কে পুনরায় বলিলেন, “প্রভু আমার বহু বৎসর হইল, বনে গিয়াছেন ; আজ আমার প্রীতিকর ও দায় কীর্ত্তন প্রুতিগোচর হইল ; অতএব মনুষ্য *চিয়া থাকিলে অন্ততঃ একশত বৎসরে ও তাহার আনন্দ উদয় হয়, এই লৌকিক গাথা আমার পক্ষে সত্য বলিয়া প্রতিভাত হইতেছে । রাঘব ও বানরগণের পরম্পর মিলন কিরূপে হুইল ? সত্য বল ; তোমার মঙ্গল হউক ; তোমার কথা আমি বিশ্বাস করিব।” হনুমান, মহাত্মা ভরত কর্তৃক এইরূপ কথিত হইয়া যথাক্রমে রামচরিত সম্পূর্ণরূপে বলিল । ভরত, পানতনয়ের সেই পরমানন্দ-জনক বাক্য শুনিয়া হৃষ্টচিত্তে হাইচিত্ত শত্রুঘ্নকে আজ্ঞা করিলেন;–“হে রঘুনন্দন! নগরে যত দেবমূর্ত্তি আছেন—মুবুদ্ধি ব্রাহ্মণগণ, বিবিধ উপহার ও বলি দ্বারা তাহাদিগের পূজা করুন। স্থত, বৈতালিক, বন্দী, স্ততিপাঠক ও বেশু্যাগণ—অদ্যই দলে দলে নির্গত হউক, রাজপত্নীগণ, অমাত্যগণ, হস্তী, অশ্ব, রথ, পদাতি, সেনাসমূহ, ব্রাহ্মণগণ, পুর. বাসিগণ এবং যে সকল রাজা এখানে উপস্থিত আছেন, তাহার-সকলেই আজ রাখবের চন্দ্রানন দেখিবার জন্ম বহির্গত হউন" । ভরতের কথা শুনিয়া শত্রুঘ্ন আদেশ করিলে, বিবিধ উপহার-বিশা সুদ ব্যক্তিগণ, মুক্ত-রত্নময় সমুজ্জ্বল-তোরণচয় দ্বার নগরী সজ্জিত করিতে লাগিল এবং বিচিত্র পতাকানিকর দ্বারা নানা রকমে গৃহসকল অলস্কৃত করিতে অধ্যাত্ম-রামায়ণ লাগিল । সকলেই রামদর্শনে সবিশেষ অভিলাষে নানাবিধ রাজেচিত দ্রব্য সামগ্রী লইয়া দলে দলে নির্গত হইল ; শত সহস্ৰ অশ্ব, অযুত হস্তী, স্বর্গ স্বত্র ভূষিত দশ সহস্র রথও সঙ্গে সঙ্গে চলিল। রাজ পত্নীগণ, শিবিকারূঢ় হইয়া তথা হইতে নির্গত হই লেন ; ভরত, পাদুকাসুগল মস্তকে স্থাপিত করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে শক্রন্থের সহিত পদব্রজে রাম-দর্শনে যাত্র করিলেন। তখনই পবননন্দন বলিয়া উঠিল “ঐ ব্রহ্মার মানস কল্পিত চন্দ্র স্বর্য্য-সদৃশ পুষ্পক বিমান দূর হইতে দেখা যাইতেছে, ইহাতে সীত৷ সমেত রাম লক্ষ্মণ—দুই বীর ভ্রাতা, বানররাজ সুগ্রীন নদনকে শীঘ্র তালিঙ্গন করিয়া আনন্দীগ্রুজলে । ও মন্ত্রি পরিবৃত বিভীষণ নয়ন গোচর হইতেছেন , হে জনগণ! দর্শন কর " বাল-বৃদ্ধ-বনিতা-তরুণগণের “এই রাম এই রাম" এইরূপ কীর্ত্তন-সস্তুত আনন্দকোলাহল গগণ স্পর্শ করিল। রথ, হস্তী ও অশ্বযানে অবস্থিত জনগণ, অবতরণপূর্বক ভূতলে দণ্ডায় মান হইয়া আকাশমণ্ডলে বিরাজমান চন্দ্রের ন্যায় বিমানারূঢ় শ্রীরামকে দেখিতে লাগিল। কৃতাঞ্জলিপুটে রাম-দর্শনার্থ উদ্‌গ্রীব হৃষ্টচিত্ত ভরত, সুমেরু পর্ব্বস্তস্থ দিবাকরের ন্যায় বিমান সম্মুখে অবস্থিত রঘুনন্দন রামকে আনন্দে প্রণত হইয়। বন্দনা করি লেন ; অনস্তর, সেই বিমান, রামের অনুমতিক্রমে ভূতলে অবতরণ করিল। সানুজ ভরত, রাম কর্তৃক সেই বিমানে আরোহিত হইলেন। তখন ভরত রাম সমীপে উপস্থিত হইবামাত্র সহৰ্ষে পুনরায় তাহাকে অভিবাদন করিলেন। রঘুনন্দন, বহুকাল পরে অবলোকিত ভ্রাতা ভরতকে উঠাইয়া নিজ ক্রোডে বসাইলেন ও আনন্দে তাহাকে আলিঙ্গন করি. লেন। অনস্তর প্রেম-বিহ্বল ভরত, প্রীতি সহকাপে লক্ষ্মণের সহিত যথোচিত ব্যবহার করিয়া নিজনম কীর্ত্তনপূর্বক জনক-নন্দিনীকে অভিবাদন করি. লেন। পরে ভরত—সুগ্রীব, জাম্ববান, যুবরাজ অঙ্গদ, মৈন্দ, দ্বিবিদ, নীল, ঋষভ, সুষেণ, নল, গবাক্ষ, গন্ধমাদন, শরভ ও পনসকে আলিঙ্গন করিলেন । সেই সকল সৌম্য বানরেরাও মনুষ্যরূপ ধারণ করিয়া হৃষ্টচিত্তে কুশল প্রশ্ন করিল । অনন্তর, ভরত, সুগ্রীবকে পুনরায় আলিঙ্গন করিয়া ভক্তি.সহকারে বলিতে লাগিলেন ;-—“তোমার সাহা, য্যেই ঐরামের জয় হইয়াছে, রাবণ বধ হইয়। গিয়াছে। সুগ্রীব ! আমরা চার ভাই ছিলাম, তুমি আমাদিগের পঞ্চম ভ্রাতা হইলে’ । তখন শক্রয় সবিনয়ে রাম-লক্ষ্মণকে অভিবাদন করিয়া পশ্চাৎ সীতার চরণ বন্দনা করিলেন। রাম,