পাতা:অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अनाबद्ध বাড়িতে মেয়ে-জামাই থাকত। সে মেয়ে-জামাই তো লিখেচেন মারা গিয়েচেছেলেপিলে কােরর নেই।-- () অপ বলিল, হ্যা, তাই তো লিখেচোন। নিশ্চিন্দিপারে গিয়ে আমাদের খোঁজ করেচেন। সেখানে শানোচেন কাশী গিাইচি । তারপর কাশীতে গিয়ে আমাদের সব খবর জেনেচেন । এখানকার ঠিকানা নিয়েচেন বোধ হয়। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে । সর্বজয়া হাসিয়া বলিল-আমি দােপরেবেলা খেয়ে একটু বলি গড়াই-ক্ষেমিঝি বললে তোমার একখানা চিঠি আছে । হাতে নিয়ে দেখি আমার নাম-আমি তো অবাক হয়ে গেলাম । তারপর খালে পড়ে দেখি এই-নিস্তুে আসবেন। লিখচেন শীগগির। দ্যাখ্যা দিকি, কবে আসবেন, লেখা আছে কিছ ? অপ বলিল, বেশ হয়, না মা ? এদের এখেনে একদন্ড ভাল লাগে না । তোমার খাটুনিটা কমে-সেই সকালে উঠে। রান্না-বাড়ি ঢোকো, আর দটো তিনটে ব্যাপারটা এখনও সবজিয়া বিশ্ববাস করে নাই। আবার গহি মিলিবে, আশ্রয় মিলিবে, নিজের মনোমত ঘর গড়া চলিবে ! বড়লোকের বাড়ির এ রাধিনী বত্তি, এ ছন্নছাড়া জীবনযাত্রায় কি এতদিনে-বিশ বাস হয় না। অদ্যটি তেমন নয়, বলিয়া অভয় করে । তাহার পর দ’জনে মিলিয়া নানা কথাবাত চলিল। জ্যাঠামশায় কি রকম, লোক সেখানে যাওয়া ঘটিলে কেমন হয়,--নানা কথা উঠিবার সময় অপ বলিল —শেঠেদের বাড়ির পাশে কাঠগোলায় পতুলনাচ হবে একটু পরে। দেখে আসবো का ? --সকাল সকাল ফিরবি, যেন ফটক বন্ধ করে দেয় না, দেখিস--- পথে যাইতে যাইতে খাঁশিতে তাহার গা কেমন করিতে লাগিল। মন যেন শোলার মত হালকা। মন্তি, এতদিন পরে মাক্তি ! কিন্তু লীলা যে আসিতেছে ? পর্তুলনাচের আসরে বসিয়া কেবলই লীলার কথা মনে হইতে লাগিল। লীলা আসিয়া তাহার সহিত মিশিবে তো ? হয়ত এখন বড় হইয়াছে, হয়ত আর তাহার সঙ্গে কথা বলবে না । পর্তুলনাচ আরম্ভ হইতে অনেক দেরি হইয়া গেল । না দেখিয়াও সে যাইতে পারিল না । অনেক রাত্রে যখন আসর ভাণ্ডিয়া গেল, তখন তাহার মনে পড়িল, এত রাত্রে বাড়ি ঢোকা যাইবে না, ফটক বন্ধ করিয়া দিয়াছে; বড়লোকের বাড়ির দারোয়ানেরা কেহ তাহার জন্য গরজ করিয়া ফাটক খলিয়া হবে না । সঙ্গে সঙ্গে বড় ভয়ও হইল। রাত্রিতে এ রকম একা সে বাড়ির বাহিরোেকাটায় নাই। কোথায় এখন সে থাকে ? মদ-ই বা কি বলিবে ! আসরের সব লোক চলিয়া গেল। আসরের কোণে একটা পান-লেমনেডের দোকানে তখনও বেচা-কোেনা চলিতেছে । সেখানে একটা কাঠের বাক্সের উপর সে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তারপর কখন সে ঘামাইয়া পড়িয়াছে জানে না, ঘাম ভাঙিয়া দেখিল ভোর হইয়া গিয়াছে, পথে লোক চলাচল আরম্ভ হইয়াছে ।