পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেলে না বলিয়া বুড়ী সংসার হইতে লুকাইয়া আনিয়া সেগুলি বিবাহের বেতের পেটরার মধ্যে সঞ্চয় করিয়া রাখিয়া দেয়। সৰ্বজয়ী এ ঘরে আসে কচিৎ কালেভদ্রে কখনো । কিন্তু সন্ধ্যার সময় তার মেয়ে ঘরের দাওয়ায় ছেড়া-কঁথা-পাত বিছানায় বসিয়া অনেকক্ষণ পর্যন্ত একমনে পিসিমার মুখে রূপকথা শোনে। খানিকক্ষণ এ গল্প ও গল্প শুনিবার পর খুকী বলে-পিতি, সেই ডাকাতের গল্পটা বল তো । গ্রামের একঘর গৃহস্থবাড়ীতে পঞ্চাশ বছর আগে ডাকাতি হইয়াছিল, সেই গল্প। ইতিপূর্বে বহুবার বলা হইয়া গেলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে উহার পুনরাবৃত্তি করিতে হয়, খুকী ছাডে না । তাহার পর সে পিসিমার মুখে ছড়া শোনে। সেকালের অনেক ছড ইন্দির ঠাকুরুণের মুখস্থ ছিল। অল্পবয়সে ঘাটে পথে সমবয়সী। সঙ্গিনীদের কাছে ছড়া মুখস্থ বলিয়া তখনকার দিনে ইন্দির ঠাকুরুণ কত প্রশংসা আদায় করিয়াছে । তাহার পর অনেকদিন সে এরকম ধৈর্যশীল শ্রোতা পায়। নাই , পাছে মরিচ পডিয়া যায়, এইজন্য তাহার জানা সব ছড়াগুলিই আজকাল প্রতি সন্ধ্যায় একবার ক্ষুদ্র ভাইঝিটির কাছে আবৃত্তি করিয়া ধাবা *ানাইয়া রাখে। টানিয়া টানিয়া আবৃত্তি করে ও ললিতে চাপাকলিতে একটা কথা শুনসে, রাধার ঘরে চোর ঢুকেছেএই পর্যন্ত বলিয়া সে হাসি-হাসি মুখে প্রতীক্ষার দৃষ্টিতে ভাইঝির দিকে চাহিয়া থাকে। খুকী উৎসাহের সঙ্গে বলে-চুলোেবাধ। এক-মিনসে —“মি” অক্ষরটার উপর অকারণ জোর দিয়া ছোট মাথাটি সামনে তাল রাখিবার ভাবে ঝুকাইয়া পদটার উচ্চারণ শেষ করে। ভারি আমোদ লাগে খুকীর। তাহার পিসি ভাইঝিকে ঠিকাইবার চেষ্টায় এমন সব ছড়া আবৃত্তি করে ও পাদপূরণের জন্য ছাডিয়া দেয়, যাহা হয়তো দশ পনেরে দিন বলা হয় নাইকিন্তু খুকী ঠিক মনে রাখে, তাহাকে ঠকানো কঠিন। খানিক রাত্রে তাহার মা খাইতে ডাকিলে সে উঠিয়া যায়। পথের পাঁচালী দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ হরিহর রায়ের আদি বাসস্থান যশড়া-বিষ্ণুপুরের প্রাচীন ধনী-বংশ চৌধুরীরা নিষ্কর ভূমিদান করিয়া যে কয়েকঘর ব্রাহ্মণকে সেকালে গ্রামে বাস করাইয়াছিলেন, হরিহরের পূর্বপুরুষ বিষ্ণুরাম রায় তাহদের মধ্যে একজন। bም