পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃটিশ শাসন তখনও দেশে বদ্ধমূল হয় নাই। যাতায়াতের পথ সকল ঘোর বিপদসঙ্কুল ও ঠগী, ঠ্যাঙাডে, জলদসু্য প্রভৃতিতে পূর্ণ থাকিত । এই ডাকাতের দল প্রায়ই গোয়ালা, বাগদী, বাউড়ী শ্রেণীর লোক ! তাহারা অত্যন্ত বলবান,-লাঠি এবং সড়কী চালানোতে সুনিপুণ ছিল। বহু গ্রামের নিভৃত প্রান্তে ইহাদের স্থাপিত ডাকাতে-কালীর মন্দিরের চিহ্ন এখনও বর্তমান আছে। দিনমানে ইহারা ভালমানুষ সাজিয়া বেড়াইত, রাত্রে কালীপূজা দিয়া দূর পল্লীতে গৃহস্থ-বাড়ী লুঠ করিতে বাহির হইত। তখনকার কালে অনেক সমৃদ্ধিশালী গৃহস্থও ডাকাতি করিয়া অর্থ সঞ্চয় করিতেন। বাংলা দেশে বহু জমিদার ও অবস্থাপন্ন গৃহস্থের অর্থের মূলভিত্তি যে এই পূবপুরুষসঞ্চিত লুষ্ঠিত ধনরত্ন, র্যাহারই প্রাচীন বাংলার কথা জানেন, তাহারা ইহাও জানেন। বিষ্ণুবাম রায়ের পুত্র বীরু রায়ের এইরূপ অখ্যাতি ছিল। তাহার অধীনে বেতনভোগী ঠাঙাডে থাকিত। নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের উত্তরে যে কঁাচা সড়ক ওদিকে চুয়াডাঙা হইতে আসিয়া নবাবগঞ্জ হইয়া টাকী চলিয়া গিয়াছে, ওই সডকোব ধাবে দিগন্তবিস্তৃত বিশাল সোনাডাঙার মাঠের মধ্যে, ঠাকুরবি পুকুর নামক সেকালকার এক বড় পুকুরের ধারে ছিল ঠাঙান্ডেদের আডড । পুকুরধাবে প্রকাণ্ড বটগাছের তলে তাহারা লুকাইয়া থাকিত এবং নিৰীহ পণিককে মারিয়া তাহার যথাসর্বস্ব অপহরণ কবিতা । ঠাঙাডেদেব কার্যপ্রণালী ছিল অদ্ভুত ধরণেব । পথ-চলতি লোকের মাথায় লাঠির আঘাত করিয়া আগেই তাহাকে মারিয়া ফেলিয়। তবে তাহার। তাহার কাছে অর্থান্বেষণ কবিত—ম রিয়া ফেলিবার পর একপ ঘটনাও বিচিত্র ছিল না যে, দেখা গোল নিহত ব্যক্তির কাছে সিকি পয়সাও নাই। পুকুরের মধ্যে লাস গুজিয়ী রাখিয়া ঠাঙাডেবা পরবর্তী শিকারের উপর দিয়া এ বৃথা শ্রমটুকু পোষাইয়। লাইবাব আশায় নিৰীহ মুখে পুকুরপাডের গাছতলায় ফিরিয়া যাইত । গ্রামের উত্তরে এই বিশাল মাঠের মধ্যে সেই বটগাছ আজও আছে, সড়কের ধারেব একটা অপেক্ষ রুতি নিম্নভূমিকে আজও ঠাকুরবি পুকুর বলে। পুকুরের বিশেষ চিহ্ন নাই, চোেদ আন ভরাট হইয়া গিয়াছে’-ধান আবাদ করিবার সময় চাষা দেন। লাঙলের ফালে সেই নাবাল জমিটুকু হইতে আজও মাঝে মাঝে নরমুণ্ড উঠিয়া থাকে। শোনা যায় পূৰ্বদেশীয় এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বালক-পুত্রকে সঙ্গে করিয়া কালীগঞ্জ অঞ্চল হইতে টাকী শ্রীপুরের ওদিকে নিজের দেশে ফিরিতেছিলেন। সময়টা কাতিক মাসের শেষ, কন্যার বিবাহের অর্থসংগ্রহের জন্য ব্রাহ্মণ বিদেশে বাহির হইয়াছিলেন, সঙ্গে কিছু অর্থ ও জিনিষপত্র ছিল। হরিদাসপুরের বাজারে চটিতে রন্ধন-আহারাদি করিয়া তাহারা দুপুরের কিছু পরে পুনরায় পথে বাহির s