পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগেকার মত আর মুখে শুনিতে হয় না, নিজেই জলের মত পড়িয়া যায় ও বুঝিতে পারে। পড়াশুনায় তাহার বুদ্ধি খুব তীক্ষ, তাহার বাবা মাঝে মাঝে তাহাকে গাঙ্গুলি বাড়ীর চণ্ডীমণ্ডপে বৃদ্ধিদের মজলিসে লইয়া যায়, রামায়ণ কি পাঁচালী পড়িতে দিয়া বলে, পড়ে তো বাবা, এদের একবার শুনিয়ে দাও তো ? বৃদ্ধের খুব তারিফ করেন, দীনু চাটুয্যে বলেন--আর আমার নাতিটা, এই তোমার খোকারই বয়স হবে, দুখান বর্ণপরিচয় ছিড়িলে বাপু, শুনলে বিশ্বোস করবে না, এখনো ভাল ক’রে অক্ষর চিনলে নাবাপের ধারা পেয়ে বসে আছে- ঐ যে-কদিন আমি আছি রে বাপু, চক্ষু বুজলেই লাঙলের মুঠো ধরতে হবে। পুত্রগবে হরিহরের বুক ভরিয়া যায়। মনে মনে ভাবে-ওকি তোমাদের মত হবে ? কল্পের্ক তো চিরকাল সুদের কারবার। --হোলামই বা গরীব, হাজার হোক পণ্ডিতবংশ তো বটে, বাবা। মিথ্যেই তালপাত ভরিয়ে ফেলেননি পুথি লিখে, বংশে একটা ধারা দিয়ে গিয়েছেন, সেটা যাবে কোথায় ? তাদের ঘরের জানালার কয়েক হাত দূরেই বাড়ীর পাচিল এবং পাচিলের ওপাশ হইতেষ্ট পাচিলের গা ঘোষিয়া কি বিশাল আগাছার জঙ্গল আরম্ভ হইয়াছে! জানালায় বসিয়া শুধু চোখে পড়ে সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভঁটিশেওড়া গাছের মাথাগুলো, এগাছে ওগাছে দোদুল্যমান কত রকমের লতা প্রাচীন বঁাশঝাড়ের শীর্ষ বয়সের ভারে যেখানে সেঁন্দালি, বন-চালতা গাছের উপর ঝুকিয়া পড়িয়াছে, তাহার নীচের কালো মাটির বুকে খঞ্জন পাখীর নাচ ! বড় গাছপালার তলায় হলুদ, বনকচু, কচুওলের ঘন-সবুজ জঙ্গল ঠেলা ঠেলি করিয়া সুর্যের আলোর দিকে মুখ ফিরাইতে প্রাণপণ করিতেছে, এই জীবনের যুদ্ধে যে গাছটা অপারগ হইয়া গৰ্বদৃপ্ত প্রতিবেশীর আওতায় চাপা পড়িয়া গিয়াছে, পাতাগুলি বিবর্ণ মৃত্যুপাণ্ডুর, ডাটা গলিয়া আসিল—মরণাহত দৃষ্টির সম্মুখে শেষা-শরতের বন ভরা পরিপূর্ণ ঝলমলে রৌদ্র, পরগাছার ফুলের আকুল আদ্র সুগন্ধ মাখানো পৃথিবীটা তাহার সকল সৌন্দর্যরহস্য, বিপুলতা লইয়া ধীরে ধীরে আড়ালে মিলাইয়া চলিয়াছে। তাহাদের বাড়ীর ধার হইতে এ বনজঙ্গল একদিকে সেই কুঠির মাঠ, অপর দিকে নদীর ধার পর্যন্ত একটানা চলিয়াছে। অপুর কাছে। এ বন অফুরন্ত ঠেকে, সে দিদির সঙ্গে কতদূর এ বনের মধ্যে তো বেড়াইয়াছে, বনের শেষ দেখিতে পায় নাই--শুধু এইরকম তিক্তিরাজ গাছের তলা দিয়া পথ, মোটা মোটা গুলঞ্চলতা-জুলানো থোলো থোলো বানচালতার ফুল চারিধারে। ঘুড়ি পথটা আমবাগানে আসিয়া শেষ হয়, আবার এগাছের ওগাছের তলা See