পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এমন চোখ, এমন মিষ্টি গলার সুর। তাহার উপর অপুর কাছে সে সেই রাজপুত্র অজয় । কোন বনে ফিরিতে ফিরিতে অসহায় ছন্নছাড়া রূপবান রাজার ছেলের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হইয়া ভাব হইয়া গিয়াছে—চিরজন্মের বন্ধু! আর তাহাকে কি করিয়া ছাড়া যায় ! অজয়ও অনেক মনের কথা বলিয়া ফেলিল। এমন সাখী তাহার। আর জুটে নাই। সে প্রায় চল্লিশ টাকা জমাইয়াছে। আর একটু বড় হইলে সে এ-দল চাডিয়া দিবে। অধিকারী বডি মারে। সে আশুতোষ পালের দলে যাইবেসেখানে খুব সুখ, রোজ রাত্রে লুচি। না খাইলে তিন আনা পয়সা খোরাকী দেয়। এ দল ছাড়িলে সে আবার অপুদের বাড়ী আসিবে ও সে সময় কিছুদিন থাকিবে । বৈকালের কিছু আগে অজয় বলিল-চল ভাই, আজ আবার এখুনি আসারািঠবে, সকাল সকাল ফিরি। যদি ‘পরশুরামের দৰ্প-সংহার' হয় তবে আমি নিয়তি সাজবো, দেখো কেমন একটা গান আছে আরও তিন দিন যাত্রা হইল। গ্রামসুদ্ধ লোকের মুখে যাত্রা ছাড়া আর কথা নাই। পথেঘাটে মাঠে গায়ের মাঝি নৌকা বাহিতে বাহিতে, রাখাল গরু চরাইতে চরাইতে যাত্রার পালার নতুন শেখা গান গায়। গ্রামের মেয়েরা দলের ছেলেদের বাড়ী ডাকাইয়া যাহার যে গান ভাল লাগিয়াছে তাহার মুখে সে গান ফরমায়েস করিয়া শুনিতে লাগিলেন। অপু আরও তিন চারটা গান শিখিয়া ফেলিল। একদিন সে যাত্রার দলের বাসায় অজয়ের সঙ্গে গিয়াছে, সেখানে তাহাকে দলের সকলে মিলিয়া ধরিল, তাহাকে একটা গান গাহিতে হইবে। সেখানে সকলে অজয়ের মুখে শুনিয়াছে সে খুব ভাল গান গাহিতে পারে। অপু বহু সাধ্যসাধনার পর নিজের বিদ্যা ভাল করিয়া জাহির করিবার খাতিরে একটা গাহিয়া ফেলিল। সকলে তাহাকে ধরিয়া অধিকারীর নিকটে লইয়া গেল। সেখানেও তাহাকে একটা গাহিতে হইল। অধিকারী কালো রংএর ভূড়িওয়ালা লোক, আসরে জুডি সাজিয়া গান করে। গান শুনিয়া বলিল-এস না খোকা, দলে আসবে? অপুর বুকখানা আনন্দে ও গর্বে দশহাত হইল। আরও সকলে মিলিয়া তাহাকে ধরে-এস, চলো তোমাকে আমাদের দলে নিয়ে যাই। অপুর তো ইচ্ছা সে এখনি যায়। যাত্রার দলে কাজ করা যে মনুষ্যজীবনের চরম উদ্দেশ্য, সেকথা এতদিন সে কেন জানিত না, ইহাই তো আশ্চর্যের বিষয় । সে গোপনে অজয়কে বলিল, আচ্ছা ভাই, এখন যদি আমি দলে যাই, আমাকে কি সাজতে দেবে ? অজয় বলিল-এখন এই সৰী টধী, কি বালকের পার্ট এই রকম, তারপর ভাল ক’রে শিখলে অপু সখী সাজিতে চায় না-জরির মুকুট মাথায় সে সেনাপতি সাজিয়া