পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্ঞাতিভ্রাতা নীলমণি রায়ের বিধবা স্ত্রী এখানে আসিয়াছেন ও নিজেদের ভিটা জঙ্গলাবৃত হইয়া যাওয়াতে ভুবন মুখুয্যের বাটীতে উঠিয়াছেন। হরিহর নিজের বাটীতে বৌদিদিকে আনিয়া রাখিবার যথেষ্ট আগ্রহ দেখাইয়াছিল, কিন্তু নীলমণি রায়ের স্ত্রী রাজী হন নাই। এখানে বর্তমানে তঁাহার সঙ্গে আসিয়াছে মেয়ে অতসী ও ছোট ছেলে সুনীল। বড় ছেলে সুরেশ কলিকাতায় স্কুলে পড়ে, গ্রীষ্মের বন্ধের পর্সে এখানে আসিতে পরিবে না। অতসীর বয়স বছর চৌদ্দ, সুনীলের বয়স আট বৎসর। সুনীল দেখিতে তত ভাল নয়, কিন্তু অতসী বেশ সুশ্রী, তবে খুব সুন্দরী বলা চলে না। তাহা হইলেও বরাবর ইহারা লাহোর কাটাইয়াছে, নীলমণি রায় সেখানে কমিসারিয়েটে চাকরী করিতেন, সেখানেই ইহাদের জন্ম, সেখানেই লালিত-পালিত ; কাজেই পশ্চিমপ্রদেশ-সুলভ নিটোল স্বাস্থ্য ইহাদের প্রতি অঙ্গে। ইহারা এখানে প্রথম আসিলে সর্বজয়া বড়মানুষ জা’য়ের সঙ্গে মেশামেশি। করিবার চেষ্টা পাইয়াছিল । সুনীলের মা নগদে ও কোম্পানীর কাগজে দশহাজার টাকার মালিক একথা জানিয়া জা’য়ের প্রতি সম্মুমে তাহার সদয় পূর্ণ হইয়া যায়, গায়ে পড়িয়া আলাপ জমাইবার চেষ্টা কম করে নাই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বজয়া নিবোধ হইলেও বুঝিতে পারিল যে, সুনীলের মা তাতাকে ততটা আমল দিতে প্রস্তুত নহেন। তঁহার স্বামী চিরকাল বড় চাকরী করিয়া আসিয়াছেন, তিনি ও তঁাহার ছেলেমেয়ে অন্যভাবে জীবনযাপনে অভ্যন্ত । সুরু হইতেই তিনি দরিদ্র জ্ঞাতি পরিবার হরিহরের সঙ্গে এমন একটা ব্যবধান রাখিয়া চলিতে লাগিলেন যে, সর্বজয়া আপনিই হটিয়া আসিতে বাধ্য হইল। কথায় ব্যবহারে কাজে খুঁটিনাটি সব ব্যাপারেই তিনি জানাইয়া দিতে লাগিলেন যে সর্বজয়া কোনরকমেই তঁাহাদের সঙ্গে সমানে সমানে মিশিবার যোগ্য নহে। তঁহাদের কথাবার্তায় পোষাক-পরিচ্ছদে, চালচলনে এই ভাবটা অনবরত প্রকাশ পায় যে তঁাহারা অবস্থাপন্ন ঘর । ছেলে মেয়ে সর্বদা ফিট্‌ফাটু সাজিয়া আছে, কাপড় এতটুকু ময়লা হইতে পায় না, চুল সর্বদা আঁচড়ানো, অতসীর গলায় হার, হাতে সোনার চুড়ি, কানে সোনার দুল, একপ্রস্থ চা ও খাবার না খাইয়া সকালে কেহ কোথাও বাহির হয় না, সঙ্গে পশ্চিমা চাকর আছে, সে-ই সব গৃহকর্ম করে-মোটের উপর সব বিষয়েই সর্বজয়াদের দরিদ্র সংসারের চালচলন হইতে উহাদের ব্যাপারের বহু পার্থক্য । সুনালের মা নিজের ছেলেকে গ্রামের কোন ছেলের সঙ্গেই বড় একটা মিণিতে দেন না, অপুর সঙ্গেও নয়-পাছে, পাড়াগায়ের এই সব অশিক্ষিত, অসভ্য ছেলেপিলেদের দলে মিশিয়া তাহার ছেলেমেয়ে খারাপ হইয়া যায়। brbr