পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দরজা খুলিয়া গেল, নবাব মত্ত অবস্থায় কক্ষে প্রবেশ করিয়া বলিলেন-সুন্দরী, আমার হুকুমে সরোজ মরিয়াছে, আর কেন-ইত্যাদি। সরোজিনী সদৰ্পে ঘাড় বঁাকাইয়া বলিলেন-রে পিশাচ, রাজপুত রমণীকে তুই এখনও চিনিস নাই, এ দেহে প্রাণ থাকিতে-ইত্যাদি। এমন সময় কাহারা ভীম পদাঘাতে কারাগারের জানালা ভাঙ্গিয়া গেল। নবাব চমকাইয়া উঠিয়া দেখিলেনএকজল জটাজুটধারী তেজঃপুঞ্জ-কলেবর সন্ন্যাসী, সঙ্গে যমদূতের মত বলিষ্ঠ চার-পাঁচজন লোক। সন্ন্যাসী রোষকষায়িত নয়নে নবাবের দিকে চাহিয়া বলিলেন-নরাধম, রক্ষক হইয়। ভক্ষক ?-পরে সরোজিনীর দিকে চাহিয়া বলিলেন-মা, আমি তোমার স্বামীর গুরু-যোগানন্দ স্বামী, তোমার স্বামীর প্রাণহানি হয় নাই, আমার কমণ্ডুলুর জলে পুনর্জীবন লাভ করিয়াছে, এখন তুমি চল মা আমার আশ্রমে, বৎস সরোজ তোমার অপেক্ষা করিয়া আছে।-- গ্রন্থকারের লিপিকৌশল সুন্দর-সরোজের এই বিস্ময়জনক পুনরুজ্জীবন আরও বিশদভাবে ফুটাইবার জন্য তিনি পরবর্তী অধ্যায়ের প্রতি পাঠকের কৌতুহল উদ্দীপ্ত করিয়া বলিতেছেন- এইবার চল পাঠক, আমরা দেখি বধ্যভূমিতে সরোজের প্রাণদণ্ড হইবার পর কি উপায়ে তাহার পুনর্জীবন লাভ সম্ভব হইলইত্যাদি । এক একটি অধ্যায় শেষ করিয়া অপুর চোখ ঝাপসা হইয়া আসে,-গলায় কি যেন আটকাইয়া যায়। আকাশের দিকে চাহিয়া সে দু-এক মিনিট কি ভাবে,--আনন্দে, বিস্ময়ে, উত্তেজনায় তাহার দুই কান দিয়া যেন আগুন বাহির হইতে থাকে, পরে রুদ্ধনিঃশ্বাসে। পরবর্তী অধ্যায়ে মন দেয়। সন্ধ্যা হইয়া যায়, চারিধারে ছায়া দীর্ঘ হইয়া আসে, মাথার উপর বঁাশঝাড়ে কত কী পাখীর ডাক শুরু হয়, উঠি উঠি করিয়াও বইএর পাতার এক ইঞ্চি উপরে চোখ রাখিয়া পড়িতে থাকে-যতক্ষণ অক্ষর দেখা যায় । এই রকম বই তো সে কখনো পড়ে নাই ? কোথায় লাগে সীতার বনবাস আর ডুবালের গল্প ? বাড়ী আসিলে তাহার মা বকে—এমন হাবল ছেলেও তুই ? পরের মাছ চৌকি দিস গিয়ে সেই একলা বনের মধ্যে ব’সে একথানা বই পড়বার লোভে ? আচ্ছা বোকা পেয়েছে তোকে ! কিন্তু বোকা অপুর লাভ যেদিক দিয়া আসে, তাহার সেদিক সম্বন্ধে কোন ধারণাই নাই ! আজিকাল সে দুইখানা বই পাইয়াছে ‘মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত’ ও ‘রাজপুত জীবন-সন্ধ্যা' - উইঢিবি, বৈঁচিবনের প্রেক্ষাপটে নিন্তব্ধ দুপুরোয় মায়ায় দৃশ্যের পর দৃশ্য পরিবতিত হইয়া চলে-জেলেখা নদীর উপর %ሕ8