পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাস যাত্রার পালা লিখেছিল খাতাতে, আমায় পড়ে শোনালে। পরে অপুকে বলিল-নাম লিখে দিসনি তোর ? নাম লিখে দে ।

  • অপু এবার একটু অপ্রতিভাতার সুরে বলিল যে, গল্পটা তাহার শেষ হয় নাই, হইলেই নাম লিখিয়া দিবে এখন ! ‘সচিত্র যৌবনে-যোগিনী’ নাটকের ধরণে গল্প আরম্ভ করিলেও শেষটা কিরূপ হইবে সে ভাবিয়া ঠিক করিতে পারে নাই ; অথচ দীর্ঘ দিন তাহার কাছে খাতা থাকিলেও রাণুদি-বিশেষ করিয়া অতসীদি পাছে তাহার কবিপ্রতিভা সম্বন্ধে সন্দিহান হইয়া পড়ে, এই ভয়ে অসমাপ্ত অবস্থাতেই ফেরৎ দিয়াছে ।

তাহার বাবা বাড়ীতে নাই। সকালে উঠিয়া সে তাহদের গ্রামের আর সকলের সঙ্গে পাশের গ্রামের এক আদ্যশ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণে গেল। সুনীলও গোল তাহার সঙ্গে। নানা গ্রামের ফলারে বামুনের দল পাঁচ-ছয় ক্রোশ দূর হইতেও হাটিয়া আসিয়াছে । এক-এক ব্যক্তি পাঁচ-ছয়টি করিয়া ছেলেমেয়ে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছে, সকলকে সুবিধামত স্থানে বসাতে গিয়া একটা দাঙ্গা বাধিবার উপক্রম। প্রত্যেকের পাতে চারিখানা করিয়া লুচি দিয়া যাইবার পর পরিবেশনকারীরা বেগুনভাজ পরিবেশন করিতে আসিয়া দেখিল কাহারও পাতে লুচি নাই-সকলেই পার্শ্ববর্তী চাদরে বা গামছায় লুচি তুলিয়া বসিয়া আছে! একটি ছোট ছেলে অতশত না বুঝিয়া পাতের লুচি ছিড়িতে যাইতেছে-তাহার বাপ বিশ্বেশ্বর ভট্টচাষ ছো। মারিয়া ছেলের পাত হইতে লুচি উঠাইয়া পাশের চাদরে রাখিয়া বলিল-এগুলো রেখে দাও না! আবার এখুনি দেবে এখন। তাহার পর খানিকক্ষণ ধরিয়া ভীষণ সোরগোল হইতে লাগিল-“লুচির ধামাটা এ সারিতে,’ ‘কুমড়োটা যে আমার পাতে একেবারেই’, ‘ওহে, গরম গরম দেখে,’ ‘মশাই কি দিলেন হাত দিয়ে দেখুন দিকি, স্রেফ কঁাচা ময়দা’- ইত্যাদি। ছাদার পরিমাণ লইয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্রাহ্মণদের তুমুল বিবাদ। কে একজন চীৎকার করিয়া বলিতে লাগিল-তা হোলে সেখানে ভাদর লোকদের নেমাতন্ন করতে নেই। স’-পাচগণ্ডা লুচি এ একেবারে ধরা-বাধা ছাদার রেটু-বল্লাল সেনের আমল থেকে বাধা রয়েচে । চাইনে তোমার ছাদা, কন্দগ্নে মজুমদার এমন জায়গায় কখনও— কর্মকর্তা হাতে পায়ে ধরিয়া কন্দৰ্প মজুমদারকে প্রসন্ন করিলেন। অপুও এক পুটলি ছাদা বহিয়া আনিল। সর্বজয়া তাড়াতাড়ি বাহিরে আসিয়া হাসিমুখে বলিল-ওম, এযে কত এনেচিস-দেখি খোল তো ? লুচি পানতুয়া, গজা-কত রে! ঢেকে রেখে দি, সকাল বোলা থেও এখন।