পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সব সুশ্রী ইংরাজ বালক-বালিকা, সোনা-করা যাদুকর বটগাছ, নির্জম-প্রান্তরে চিন্তারতা লোরেনের সেই নীলনয়ন পত্নীবালা জোয়ান-আরও কত কি আছে! তাহার টিনের বাক্সের বই কখানা, রাণু--দিদির বাড়ীর বইগুলি, সুরেশ দাদার কাছে চাহিয়া লওয়া বইখানা, পুরাতন “বঙ্গবাসী’ কাগজগুলা ওই সব দেশের কথাই তাহাকে বলে, সে সব দেশে কোথায় কাহারা যেন তাহার জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে। সেখান হইতে তাহারও ডাক আসিবে একদিন,- সেও যাইবে !!-- একথা তাহার ধারণায় আসে না কতদূরে সে সব দেশ, কে তাহাকে লইয়া যাইবে, কি করিয়া তাহার যাওয়া সম্ভব হইবে !! আর দিনকতক পরে বাড়ীবাড়ী ঠাকুর পূজা করিয়া যাহাকে সংসার চালাইতে হইবে, রাত্রিতে যাহার পড়িবার তেলের জন্য মায়ের বকুনি খাইতে হয়, অত বয়স পর্যন্ত যে ইস্কুলের মুখ দেখিল না, ভাল কাপড়, ভাল জিনিস যে কাহাকে বলে জানে না-সেই মূর্থি, অখ্যাত সহায়সম্পদহীন পল্লীবালককে বৃহত্তর জীবনের আনন্দ-যত্নে যোগ দিতে কে আহবান করিবে ? এ সব প্রশ্ন মনে জাগিলে হয়ত তাহার তরুণ-কল্পনার রথবেগ-তাহার আশাভরা জীবন-পথের দুর্বার মোহ, সকল ভয় সকল সংশয়কে জয় করিতে পারিত ; কিন্তু এ সকল কথা তাহার মনে ওঠে না। শুধু মনে হয়-বড় হইলেই সব হইবে, অগ্রসর হইলেই সকল সুযোগ-সুবিধা পথের মাঝে কুড়াইয়া পাইবেএখন শুধু বড় হইবার অপেক্ষা মাত্র । সে বড় হইলে সুযোগ পাইবে, দিক দিক হইতে তাহার সাদর আমন্ত্রণ আসিবো,-সে। জগৎ-জানার, মানুষ-চেনার দিগ্বিজয়ে যাইবে । রভীন ভবিষ্যৎ-স্বপ্নে বিভোর হইয় তাহার বাকী পথটুকু কাটিয়া যায়। বৃষ্টি আর পড়ে না, ঝড়ে কালো মেঘের রাশি উড়াইয়া আকাশ পরিষ্কার করিয়া দিতেছিল। তেঁতুলতলার ঘাটে ডিঙি ভিড়িতেই তাহার চমক ভাঙে ; নৌকা বাধিয়া পটুর আগে আগে সে বঁাশবনের পথে উল্লাসের শিস দিতে দিতে বাড়ীর দিকে চলে। সে-ও তাহার মা ও দিদির মত স্বপ্ন দেখিতে শিখিয়াছে। পথের পাঁচালী ል সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ আসলে অপু কিন্তু ঘুমায় নাই, সে জাগিয়াছিল। চোখ বুজিয়া শুইয়া রাত্রে মায়ের সঙ্গে বাবার যেসব কথাবার্তা হইতেছিল, সে সব শুনিয়াছে। তাহারা Rese