পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|-করুক সে-তুই পাজি ছেলে অত ওপরের ঘরে যাসন্টাস কেন ? বিকেলে ওপরে বসে বসে কি করিস ? 禄 হরিহরের জরটা একটু কমিল। অপু স্কুল হইতে আসিয়া বই নামাইয়া রাখিতেছে। পায়ের শব্দ পাইয়া হরিহর বলিল-থোকা এস, একটু বসে বাবা অপু বসিয়া বসিয়া স্কুলের গল্প পড়িতে লাগিল। হাসিমুখে নীচু সুরে বলিল—এই দু’মাস তো স্কলে গিাঁইচি, এরই মধ্যে বাবা, সবাই খুব ভালবাসে, রোজ রোজ ফাস্ট বেঞ্চে বসি-স্কলে আমাদের ক্লাসে একখানা ছাপিয়ে কাগজ বার করবে। একমাস অন্তর । আমাকে সেই দলে নিয়েচে-তোমায় দেখাবো বাবা বেরুলে হরিহরের বুকের ভিতরটা মমতায় বেদনায় কেমন করে। অপু একখানা কাগজ বাহির করিয়া বলে--একটা লেখা লিখেচি-কাগজখানা ছাপাবে বলেচে, আমার নামে-কিন্তু যারা দুটাক কোরে চাদ দেবে শুধু তাদেরই লেখা ছাপবে বলেচে-দুটাকা দেবে বাবা ? হরিহর অধীর আগ্রহে ছেলের হাত হইতে কাগজখানা লইয়া পড়িতে সুরু করে। ছেলে ষে লেখে সে খবর সে জানিত না। রাজপুত্রের মৃগয়ার গল্প, সুন্দর বানানো, হরিহর খুশি হইয়া বালিশে ভর দিয়া উঠিয়া বসে, বলে,-তুই লিখেচিল খোকা ? 制 —আমি তো আরো কত লিখিচি বাবা, ভূতের গল্প, রাজকন্যের-বাড়ী থাকতে রাণুদির খাতায় লিখে লিখে দিতাম তো— সৰ্বজয়া টাকার নাম শুনিয়া দিতে চাহে না। স্বামী অসুখে পড়িয়া, এ অবস্থায় যাহা আছে তাহা সংসারের খরচেই কুলাইবে না, দরকার নাই ছাপানো কাগজে । হরিহর বুঝাইয়া বলিয়া টাকা দেওয়ায়, বলে-দাও গিয়ে, আহা খোকার লেখাটা ছাপিয়ে আসুক, সেরে উঠে পথ্যি করলেই ঠাকুরবাড়ীর ভাগবত পাঠটা তো ঠিকই রয়েচে-ওতেও তো গোটা দশেক টাকা পাবাে— দিন দুই পরে অপু নিরাশ মুখে রাঙা ঠোঁট ফুলাইয়া বাবার কাছে চুপি চুপি আসিয়া বলে, হ’লো না বাবা । ছাপাখানাওয়ালার লোকেরা বেশী দাম চেয়েচে, তাই আজ স্কলে বলে দিয়েচে, চার টাকা ক'রে চান্দা চাই,- ছেলের মুখের নিরাশার ভাব হরিহরের বুকে খচ করিয়া বিধে। খানিকক্ষণ অন্য কথার পর সে বলে-দোখ দিকি খোকা তোর মা কোথায় গেল ? বালিশের তলা হইতে চাবির থোলো বাহির করিয়া দিয়া বলে-চুপি চুপি ওই কাঠের চাপ বাক্স, যেটাতে আমার কফির কলমের বাণ্ডিল আছে, ওইটেই খোল তো ?