পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙালীটোলায় ঘোরাঘুরি করিতে লাগিল। খবর পাইয়া রামকৃষ্ণ মিশনের কয়েকজন সেবকও আসিয়া পৌছিল। মণিকণিকার ঘাটে সৎকার-অন্তে সন্ধ্যাবেল অপু স্নান করিয়া ঠাণ্ডা পশ্চিমে বাতাসে কঁাপিতে কঁাপিতে পৈঠার উপর উঠিল। রামকৃষ্ণ মিশনের একজন সেবক ও নন্দবাবু তাহাকে উত্তরীয় পরাইতেছিল। বেলা খুব পড়িয়া গিয়াছে, অন্তদিগন্তের স্নান আলো পাথরের মন্দিরগুলার আগাটুকুতে মাত্র চিক্‌চিক্‌ করিতেছে। সারাদিনের ব্যাপারে দিশাহারা অপুর মনে হইল। তাহার বাবার পরিচিত গলায় উৎসুক শ্রোতাগণের সম্মুখে কে যেন বসিয়া আবৃত্তি করিতেছে ; কালে বৰ্ষতু পর্জন্যং পৃথিবী শস্যশালিনীযে বাবাকে সকলে মিলিয়া আজি মণিকণিকার ঘাটে দাহ করিতে আনিয়াছিল,-রোগে, জীবনের যুদ্ধে পরাজিত সে বাবা স্বপ্ন মাত্র-অপু তাহাকে চেনে না, জানে না।--তাহার চিরদিনের একান্ত নির্ভরতার পাত্র, সুপরিচিত, হাসিমুখ বাবা জ্ঞান হইয়া অবধি পরিচিত সহজ সুরে সুকণ্ঠে, প্রতিদিনের মত কোথায় বসিয়া যেন উদাস পূরবীর সুরে আশীৰ্বাচন গান করিতেছে কালে বৰ্ষতু পর্জন্যং পৃথিবী শস্যশালিনীলোকাঃ সন্তু নিরাময়াঃ• • • • • • • • ********* পথের পাঁচালী একত্রিংশ পরিচ্ছেদ কোনোরূপে মাসখানেক কাটিল। এই একমাসের মধ্যে সবজয়া নানা উপায় চিস্তা করিয়াছে কিন্তু কোনোটাই সমীচীন মনে হয় না। দু-একবার দেশে ফিরিবার কথাও যে তাহার না মনে হইয়াছে এমন নয়, কিন্তু যখন সে কথা মনে ওঠে, তখনই সে তাহ চাপিয়া যায়। প্রথমত তো দেশের এক ভিটাটুকু ছাড়া বাকী সব কতক দেনার দায়ে, কতক এমনি বেচিয়া কিনিয়া আসা হইয়াছে, জমিজমা কিছুই আর নাই ; দ্বিতীয়ত সেখান হইতে বিদায় লইবার পূর্বে সে পথে, ঘাটে, বৌ-ঝিদের সম্মুখে নিজেদের ভবিষ্যতের সুখের ছবি, কতভাবে আঁকিয়া দেখাইয়াছে। নিশ্চিন্দিপুরের মাটি ছাড়িয়া যাওয়ার অপেক্ষা মাত্র, এ পোড়া মূর্থের দেঙ্গে তাহার স্বামীর কঙ্কর কেহ যুঝিল না, RSAt7r