পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খোজটা করেচি তোদের । আর-বছর বোশেখে মেয়েটা গেল মারা, হরিধান তো তার আগেই। এই বয়সে হাত পুড়িয়ে রোধেও খেতে হয়েচে,-কেউ, নেই সংসারে। তাই ভাবলাম, হরিহর বাবাজীর তো নিশ্চিন্দপুর থেকে উঠে। যাবার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন থেকেই, যাই এখানেই নিয়ে আসি। একটু ধানের জমি আছে, গৃহদেবতার সেবাটাও হবে। গ্রামে ব্রাহ্মণ তেমন নেই,- আর আমি তো এখানে থাকব না। আমি একটু কিছু ঠিক ক’রে দিয়েই কাশী চলে যাবো । একরকম ক’রে হরিহর নেবেন চালিয়ে। তাই গেলাম নিশ্চিন্দপুরে সর্বজয়া বলিল, আপনি বুঝি আমাদের কাশী যাওয়ার কথা শোনেন নি ? --তা কি ক’রে শুনবো ? তোমাদের দেশে গিয়ে শুনলাম, তোমরা নেই। সেখানে । কেউ তোমাদের কথা বলতে পারে না-সবাই বলে তারা এখান থেকে বেচে-কিনে তিন-চার বছর হ’ল কাশী চলে গিয়েচে । তখন কাশী যাই । কাশীতে আমি আছি আজ দশ বছর। খুঁজতেই সব বেরিয়ে পড়লো। হিসেব ক’রে দেখলাম হরিহর যখন মারা যান, তখন আমিও কাশীতেই আছি, অথচ কখনো দেখাশুনো হয় নি, তা হলে কি আর অপু আগ্রহের সুরে বলিল, নিশ্চিন্দিপুরে আমাদের বাডিটা কেমন আছে, দাদামশায় ? -সেদিকে আমি গেলাম। কৈ ! পথেই সব খবর পেলাম কি-না। আমি আর সেখানে দাড়াই নি। কেউ ঠিকানা দিতে পারলে না। ভুবন মুখুয্যে মশায় অবিশ্যি খাওয়া-দাওয়া করতে বললেন, আর তোমার বাপের একশো নিন্দে-বুদ্ধি নেই, সাংসারিক জ্ঞান নেই।--হেন তেন। যাক সে সব কথা, তোমরা এলে ভাল হল । যে ক’ঘর যজমান আছে তোমাদের বছর তাতে কেটে যাবে। পাশেই তেলিরা বেশ অবস্থাপন্ন, তাদের ঠাকুর প্রতিষ্ঠা আছে। আমি পূজোটুজো করতাম অবিহিত, সেটাও হাতে নিতে হবে ক্রমে । তোমাদের নিজেদের জিনিস দেখে শুনে নিতে হবে । উল গ্রামের মধ্যেও খুব বন, গ্রাম ছাড়াইয়া মাঠের পথেও বনঝোপ । সূর্য আকাশে অনেকখানি উঠিয়া গিয়াছে। চারিধারে প্রভাতী রৌদ্রের মেলা, পথের ধারে বনতুলসীর জঙ্গল, মাঠের ঘাসে এখনও স্থানে স্থানে শিশির জমিয়া আছে, কোন রূপকথার দেশের মাকড়সা যেন রূপালী জাল বুনিয়া রাখিয়াছে। মাঝে মাঝে কিসের একটা গন্ধ, বিশেষ কোনো ফুলের গন্ধ নয়। কিন্তু। শিশিরসিক্ত ঘাস, সকালের বাতাস, অড়হরের ক্ষেত, এখানে ওখানে বনজ গাছপালা, সবসুদ্ধ মিলাইয়া একটা সুন্দর সুগন্ধ”।