পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘামে রাঙামুখ হইয়া, কোন রকমে পূজা সাঙ্গ করিয়া অপু চলিয়া, আসিতেছিল, নিরুপমা ও বাড়ির অন্যান্য মেয়েরা তাহাকে আসন পাতিয়া বসাইয়া ভোগের ফলমূল ও সন্দেশ জলযোগ করাইয়া। তবে ছাড়িয়া দিল। মাসখানেক কাটিয়া গেল ! অপুব কেমন মনে হয় নিশ্চিন্দিপুরের সে অপূর্ব মায়াৰূপ এখানকার কিছুতেই নাই। এই গ্রামে নদী নাই, মাঠ থাকিলেও সে মাঠ নাই, লোকজন বেশী, গ্রামের মধ্যেও লোকজন বেশী । নিশ্চিন্দিপুরের সেই উদার স্বপ্নমাখানো মাঠ, সে নদীতীর। এখানে নাই, তাদের দেশের মত গাছপালা, অত ফুলফল, পাখি, নিশ্চিন্দিপুরের সে অপূর্ব বন-বৈচিত্র্য, কোথায় সে সব ? কোথায় সে। নিবিড পুষ্পিত ছাতিম বন, ডালে ডালে সোনার সিদুর ছড়ানো সন্ধ্যা ? সরকার বাড়ী হইতে আজকাল প্রায়ই পূজা করিবার ডাক আসে। শাস্তস্বভাব ও সুন্দর চেহারার গুণে অপুকেই আগে চায়। বিশেষ বারব্রতের দিনে পূজাপত্র সারিয়া অনেক বেলায় সে ধামা করিয়া নানাবাড়ির পূজার নৈবেদ্য ও চাল-কলা বহিয়া বাজী আনে। সর্বজয়া হাসিমুখে বলে, ওঃ, আজ চাল তো অনেক হয়েচে !!--দেখি ! সন্দেশ কাদের বাড়ির নৈবিদ্বি্যুতে দিলে রে । অপু খুশীর সহিত দেখাইয়া বলে, কুণ্ডুবাড়ি থেকে কেমন একছড়া কলা দিয়েচে, দেখেচো মা ? সর্বজয়ী বলে, এবার বোধ হয়। ভগবান মুখ তুলে চেয়েচেন, এদের ধরে থাকা যাক, গিয়ী লোক বড় ভালো। মেজছেলের শ্বশুরবাডির থেকে তত্ত্ব পাঠিয়েচেঅসময়ের আম-অমনি আমার এখানে পাঠিয়ে দিয়েচে-খাস এখন দুধ দিয়ে। এত নানারকমের ভাল জিনিস সর্বজয়া কখনো নিজের আয়ত্তের মধ্যে পায় নাই। তাহার কতকালের স্বপ্ন । নিশ্চিন্দিপুরের বাডিতে কত নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে, উঠানের উপর ঝুকিয়া-পডা বঁাশবনের পত্রস্পন্দনে, ঘুঘুর ডাকে, তাহার অবসন্ন অন্যমনস্ক মন যে অবাস্তব সচ্ছলতার ছবি আপন মনে ভাঙ্গিত গড়িত-হাতে খরচ নাই, কুটা বাড়িতে জল পড়ে বৃষ্টির রাত্রে, পড়ার মুখ পায় না, সকলে তুচ্ছ করে, তাচ্ছিল্য করে, মানুষ বলিয়াই গণ্য করে না-সে সব দিনের স্মৃতির সঙ্গে, আমরুল শাকের বনে পুরানো পাচিলের দীর্ঘছায়ার সঙ্গে যে সব দূরকালের দুরাশার রঙে রঙিন ভবিষ্যৎ জড়ানো ছিল--এই তো এতদিনে তাহারা পৃথিবীর भांहिऊ नांभिधा उधांनिध्रांछि । পূজার কাজে অপুর অত্যন্ত উৎসাহী। রোজ সকালে উঠিয়া সে কলুপাড়ার একটা গাছ হইতে রাশীকৃত কচি কচি বেলপাতা পাড়িয়া আনে। একটা খাত।