পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর মানুষের বাস নাই, জগতের শেষ সীমাটাই এই। ইহার পর হইতেই অসম্ভবের দেশ, অজানার দেশ, সুরু হইয়াছে। বাড়ী ফিরিবার পথে সে পথের ধারের একটা নীচু ঝোপ হইতে একটা উজল রং-এর ফলের থোলো ছিড়িতে হাত বাড়াইল । তাহার বাবা বলিল, হা হা, হাত দিও না হাত দিও না,-আলাকুশী আল কুশী। কি যে তুমি করে বাবা ! বন্ড জালালে দেখচি। আর কোনদিন কোথাও নিয়ে বেরুচ্চিনে বলে দিলাম-এক্ষুনি হাত চুলকে ফোস্কা হবে-পথের মাঝখান দিয়ে এত করে বলচি হাটতে-তা তুমি কিছুতেই শুনবে না।-- হাত চুলকুবে কেন বাবা ? হাত চুলকুবে, বিষ বিষ-আলাকুশী কি হাত দেয় বাবা ? শুয়ো ফুটে রি রি করে জলবে এক্ষুনি-তখন তুমি চীৎকার সুরু করবে। গ্রামের মধ্যে গিয়া হরিহর ছেলেকে সঙ্গে করিয়া খিড়িকীর দোর দিয়া বাড়ী ঢুকিল। সবজয়। খিডাকীর দোর খোলার শব্দে বাহিরে আসিয়া বলিল-এই এত রাত হোল! তা ওকে নিয়ে গিয়েচ, না একটা দোলাই গায়ে না কিছু ! হরিহর বলিল, আঃ নিয়ে গিয়ে যা বিরক্ত । এদিকে যায়, ওদিকে যায়, সামলে রাখতে পারিনে-আলাকুশীর ফল ধরে টানতে যায়। পরে ছেলের দিকে চাহিয়া বলিল, কুঠির মাঠ দেখবো, কুঠির মাঠ দেখবো-কেমন হোল তো কুঠির মাঠ দেখা ? পথের পাঁচালী অষ্টম পরিচ্ছেদ সকাল বেলা । আটটা কি নয়টা । হরিহরের পুত্র আপন মনে রোয়াকে বসিয়া খেলা করিতেছে, তাহার একটা ছোট টিনের বাক্স আছে, সেটার ডালা ভাঙা । বাক্সের সমুদয় সম্পত্তি সে উপুড় করিয়া মেঝেতে ঢালিয়াছে, -একটা রং ওঠা কাঠের ঘোড়া, চার পয়সা দামের একটা টোল-খাওয়া টিনের ভেঁপু-বঁাশী, গোটাকতক কডি-এগুলি সে মায়ের অজ্ঞাতসারে লক্ষ্মীপূজার কড়ির চুপড়িী হইতে খুলিয়া লইয়াছিল ও পাছে কেহ টের পায় এই ভয়ে সর্বদা লুকাইয়া রাখে-একটা দু’পয়সা দামের পিস্তল, কতকগুলো শুকনো নাটা ফল। দেখিতে ভাল বলিয়া তাহার দিদি কোথা হইতে অনেকগুলি কুড়াইয়া আনিয়াছিল, কিছু তাহাকে দিয়াছে, কিছু সে নিজের পুতুলের বাক্সে রাখিয়া ۹