পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৩৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত অষ্টম পরিচ্ছেদ একদিন অপু দুপুরবেলা কলেজ হইতে বাসায় ফিরিয়া আসিয়া গায়ের জামা ধূলিতেছে, এমন সময় পাশের বাড়ির জানালাটার দিকে হঠাৎ চোখ পড়িতে সে আর চোখ ফিরাইয়া লইতে পারিল না। জানালাটির গায়ে খড়ি দিয়া মাঝারি অক্ষরে মেয়েলি ছাদে লেখা আছে-‘হেমলতা আপনাকে বিবাহ করবে।” অপু অবাক হইয়া খানিকটা সেদিকে চাহিয়া রহিল এবং পরীক্ষণেই কৌতুকের আবেগে হাতের নোটখাতাখানা মেঝেতে ছুডিয়া ফেলিয়া আপন মনে হো-হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। পাশের বাডি-তাহার ঘর হইতে জানালাটা হাত পাঁচ ছয় দূরে—মধ্যে একটা সরু গলি । অনেকদিন সে দেখিয়াছে, পাশের বাড়ির একটি মেয়ে জানালার গরাদি ধরিয়া এদিকে চাহিয়া আছে, বয়স চৌদ-পনেরো । রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, কেঁাকৃড়া কেঁকৃেড়া চুল, বেশ মুখখানা, যদিও তাহাকে সুন্দরী বলিয়া কোনদিনও অপুর মনে হয় নাই। তাহার কলেজ হইতে আসিবার সময় হইলে প্রায়ই সে মেয়েটিকে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিত। ক্রমে শুধু দাড়ানো নয়, মেয়েট তাহাকে দেখিলেই হঠাৎ হাসিয়া জানালার আড়ালে মুখ লুকায়, কখনও বা জানালার খড়খড়ি বারকতক খুলিয়া বন্ধ করিয়া মনোযোগ আকর্ষণ করিবার চেষ্টা করে, দিনের মধ্যে দুবার, তিনবার, চারবার কাপড় বদলাইয়া ঘরটার মধ্যে অকারণে ঘোরাফেরা করে এবং ছুতানাতায় জানালার কাছে আসিয়া দাড়ায়। কতদিন এ-রকম হয়, অপু মনে মনে ভাবে-মেয়েটা আচ্ছা বেহায়া তো । কিন্তু আজকাল এ ব্যাপারে একেবারে অপ্রত্যাশিত । আজ ও-বেলা উড়ে ঠাকুরের হোটেলে খাইতে গিয়া সে দেখিয়াছিল। সুন্দর ঠাকুর মুখ ভার করিয়া বসিয়া আছে। দুই-তিনমাসের টাকা বাকী, সামান্য পুজির হোটেল, অপূর্ববাবু ইহার কি ব্যবস্থা করিতেছেন ?-আর কতদিন এ ভাবে সে বাকী টানিয়া যাইবে ?- সুন্দর ঠাকুরের কথায় তাহার মনে যে দুর্ভাবনার মেঘ জমিয়াছিল, সেটা কৌতুকের হাওয়ায় এক মুহূর্তে কাটিয়া গেল!! আচ্ছা তো মেয়েটা ? দ্যাখে কি লিখে রেখেছে-ওদের হো-হো-আচ্ছা-হি-হি-