পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়বো, রাদারফোর্ড আছেন, টমসন আছেন—এদের সব দু’বেলা দেখতে পাওয়া একটা পুণ্য-যুদ্ধ থামলে জার্মানীতে যাব, মস্ত জাত-বিরাট ভাইটালিটি-গায়টে, অস্টওয়ালডের দেশ-ওখানে কি আর না যাব ? অনিল অপুর বিদেশে ” যাইবার টান জানে-বলিল, আপনাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবো । না-হয় দু’জনে আমেরিকায় চলে যাব-আমি সব ঠিক করব দেখবেন । অনিলের প্রভাব যেমন অপুর জীবনে বিস্তার লাভ করিতেছিল, সঙ্গে সঙ্গে অপুর চরিত্রের পবিত্রতা, মনের ছেলেমানুষি ও ভাবগ্রাহিতা আনিলের কঠোর সমালোচনা ও অযথা আক্রমণ-প্রবৃত্তিকে অনেকটা সংযত করিয়া তুলিতেছিল। দূরের পিপাসা অপুর আরও অনেক বেশী, অনেক উদ্দাম-কলিকাতার ধোয়াভরা, সঙ্কীর্ণ, ভ্যাপস-গন্ধ সিওয়ার্ড ডিচের ভিতর হইতে বাহির হইয়া হঠাৎ যেন একটা উদার-প্রান্তর, জ্যোৎস্না-মাখা মুক্ত আকাশ, পাখিদের আনন্দভরা পক্ষ-সুঙ্গীতের, একটা বন-প্রান্তের রহস্তোর সাক্ষাৎ পাওয়া যায় অপুর কথার সুরে, জীবন-পিপাসু নবীন চোখের দৃষ্টিতে, অন্ততঃ অনিলের তো মনে হয়। কোন পথে যাওয়া হইবে সে কথা উঠিল । অপু উৎসাহে অনিলের কাছে ঘোষিয়া বলিল—এসো একটা প্যাক্ট করি।--দেখি হাত ? এসো, আমবা কখখনো কেরানীগিরি করব না, পয়সা পয়সা করব না কখখনো--সামান্য জিনিসে ভুলব না। কখনও-ব্যাস!--পরে মাটিতে একটা ঘূসি মারিয়া বলিল-খুব বড় কাজ কিছু একটা করব জীবনে । অনিল সাধারণতঃ অপুর মত নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠে না, তবুও আজ উৎসাহের মুখে অনেক কথা বলিয়া ফেলিল, বিলাতে পডা শেষ করিয়া সে আমেরিকায় যাইবে, জাপান হইয়া দেশে ফিরিবে । বিদেশ হইতে ফিরিয়া সারাজীবন বৈজ্ঞানিক গবেষণা লইয়াই থাকিবে । অপু বলিল-যখন দেশে ছিলাম, তখন আমার একখানা ‘প্রাকৃতিক ভূগোল’ ব’লে ছেডা, পুরনো বই ছিল—তাতে লেখা ছিল এমন সব নক্ষত্র আছে যাদের আলো আজও এসে পৃথিবীতে পৌছয় নি, সে-সব এত দূরে—মনে আছে, সন্ধ্যের সময় একটা নদীতে নৌকা ছেড়ে দিয়ে নৌকার ওপর বসে সে কথা ভাবতাম, ওপারে একটা কদম গাছ ছিল, তার মাথাতে একটা তারা উঠিত সকলের আগে, তারাটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতাম—কি যে একটা ভাব হ’ত মনে ! একটা mystery, একটা uplift-এর ভাব-ছেলেমানুষ তখন সে-সব বুঝতাম না, কিন্তু সেই থেকে যখনই মনে দুঃখ হয়েছে, কি, কোনও ছোট কাজে মন গিয়েছে, তখনই আকাশের নক্ষত্রদের দিকে চাইলেই

  • Alms