পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাপিয়া তাহাকে যেন কোথায় লইয়া ফেলিয়াছো-ঠিক সেই সময়েই মায়ের জন্য তাহার মন কেমন হইয়া উঠিত, যেখানে সে যাইতেছে সেখানে তাহার মা নাই, অমনি মায়ের কাছে যাইবার জন্য মন আকুল হইয়া পড়িত। কতবার যে এ রকম হইয়াছে। আকাশের গায়ে অনেক দূরে একটা চিল উড়িয়া যাইতেছে-ক্রমে ছোট-ছোট্ট-ছোট্ট হইয়া নীলুদের তালগাছের উচু মাথাটা পিছনে ফেলিয়া দূর আকাশে ক্রমে মিলাইয়া যাইতেছে—চাহিয়া দেখিতে দেখিতে যেমন উড়ন্ত চিলটা দৃষ্টিপথের বাহির হইয়া যাইত, অমনি সে চোখ নামাইয়া লইয়া বাহির-বাটী হইতে এক দৌড়ে রান্নাঘরের দাওয়ায় উঠিয়া গৃহকার্যরত মাকে জড়াইয়া ধরিত। মা বলিত-দ্যাখে দ্যাখো ছেলের কাণ্ড দ্যাখো-ছাড়া-ছাড়া-দেখছিস সকড়ী হাত ?--ছাড়ো মানিক আমার, সোনা আমার, তোমার জন্যে এই দ্যাথো চিংড়িমাছ ভাজছি—তুমি যে চিংড়িমাছ ভালোবাসো ? হ্যা, দুষ্টুমি করে না-ছাড়ো আহারাদির পর দুপুরবেলা তাহার মা কখনো কখনো জানালার ধারে আঁচল পাতিয়া শুইয়া ছেড়া কাশীদাসী মহাভারতখানা সুর করিয়া পড়িত। বাড়ীর ধারে নারিকেল গাছটাতে শঙ্খচিলা ডাকিত, অপু নিকটে বসিয়া হাতের লেখা ক-খ লিখিতে লিখিতে একমনে মায়ের মুখের মহাভারত পড়া শুনিত ! দুৰ্গাকে তাহার মা বলিত, একটা পান সেজে দে তো দুগগা ! অপু বলিত মা, সেই ঘুটে-কুড়োনোর গল্পটা ? তাহার মা বলে-ঘুটেকুড়োনোর কোন গল্প বলা তো-ওই সেই হরিহোড়ের ? সে তো অন্নদামঙ্গলে আছে, এতে তো নেই ? পরে পান মুখে দিয়া সুর করিয়া পড়িতে থাকিত রাজা বলে শুন শুন মুনির নন্দন। কহিব অপূর্ব কথা না যায় বর্ণন ॥ সোমদত্ত নামে রাজা সিন্ধুদেশে ঘর । দেবদ্বিজে হিংসা সদা অতিঅপু অমনি মায়ের মুখের কাছে হাতখানি পাতিয়া বলিত, আমায় একটু পান ? মা চিবানো পান নিজের মুখ হইতে ছেলের প্রসারিত হাতের উপর রাখিয়া বলিত-এঃ বড় তেতো-এই খয়েরগুলোর দোষ, রোজ হাটে বারণ করি। ও-খয়ের যেন আনে না, তবুও জানালার বাহিরে বঁাশবনের, দুপুরের রৌদ্র-মাখানো শেওড়া-ঘেটু বনের দিকে চাহিয়া চাহিয়া মহাভারতের-বিশেষত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কথা শুনিতে শুনিতে সে তন্ময় হইয়া যায়। মহাভারতের সমস্ত চরিত্রের মধ্যে কর্ণের চরিত্র বড় ভাল লাগে তাহার কাছে। ইহার কারণ কর্ণের উপর তাহার কেমন ●●