পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজী। চৌদ্দ বছরের ছেলে যখন প্রথম চেলী পরিয়া তাহদের বাড়ি পূজা করিতে গিয়াছিল, তখন হইতে অপুকে সে সত্য-সত্য স্নেহ করে তাহার দিকে টানে। অপু ঘরবাড়ি ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়ায় সে মনে মনে খুব দুঃখিত হইয়াছিল। মেয়ের গতিকে বোঝে না, বাহিরকে বিশ্বাস করে না, মানুষের উদ্দাম ছুটিবার বহিমুখী আকাঙ্খাকে শাস্ত সংযত করিয়া তাহাকে গৃহস্থালী পাতাইয়া, বাসা বাধাইবার প্রবৃত্তি নারীমনের সহজাত ধর্ম, তাহাদের সকল মাধুর্য, স্নেহ, প্রেমের প্রয়োগ-নৈপুন্য এখানে। সে শক্তিও এত বিশাল যে খুব কম পুরুষষ্ট তাহার বিরুদ্ধে দাড়াইয়া জয়ী হইবার আশা করিতে পারে। অপু বাডি ফিরিয়া নীড় বঁধাতে নিরুপমা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিল । কলিকাতায় ফিরিযা আপুব আর কিছু ভাল লাগে না, কেবল শনিবারের অপেক্ষায় দিন গুণিতে থাকে। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে যাহারা নব-বিবাহিত তাহদের সঙ্গে কেবল বিবাহিত জীবনের গল্প করিতে ও শুনিতে ভাল লাগে । কোনও রকমে , একসপ্তাহ কাটাইয়া শনিবার দিন সে বাডি গেল। অপর্ণার গৃহিণীপনায় সে মনে মনে আশ্চর্য না হইয়া পারিল না। এই সাত-আট দিনের মধ্যেই অপর্ণা বাডির চেহারা একেবারে বদলাইয়া ফেলিয়াছে। তেলি-বাডির বুড়ী বিকে দিয়া নিজের তত্ত্বাবধানে ঘরের দেওয়াল লেপিয়া ঠিক করাইয়াছে। দাওয়ায় মাটি ধরাইয়া দিয়াছে, রাঙা এলামাটি আনিয়া চারিধারে রঙ করাইয়াছে, নিজের হাতে এখানে তাক, ওখানে কুলুঙ্গি গাঁথিয়াছে, তক্তাপোষের তলাকার রাশীকৃত ইদুরের মাটি নিজেই উঠাইয়া বাহিরে ফেলিয়া গোবর-মাটি লেপিয়া দিয়াছে। সারা বাড়ি যেন ঝাকৃ ঝকৃ তক্‌ তক্‌ করিতেছে। অথচ অৰ্পশা জীবনে এই প্রথম মাটির ঘরে পা দিল। পূর্ব গৌরব যতই ক্ষুন্না হউক, তবুও সে ধনী বংশের মেয়ে, বাপ-মায়ের আদরে ললিত, বাড়ি থাকিতে নিজের হাতে তাকে কখনও বিশেষ কিছু করিতে হাইত না । মাসখানেক ধরিয়া প্রতি শনিবারে বাড়ি যাতায়াত করিবার পর অপু দেখিল তাহার। যাহা আয় ফি শনিবারে বাড়ি যাওয়ার খরচ তাহাতে কুলায় না। সংসারে দশ-বারো টাকার বেশী মাসে এ পর্যন্ত দিতে পারে নাই। সে বোঝে-ইহাতে সংসার চালাইতে অপর্ণাকে দস্তুরমত বেগ পাইতে হয়। অতএব ঘন ঘন বাড়ি যাওয়া বন্ধ করিল। ডাকপিয়নের খাকির পোশাক ষে বুকের মধ্যে হঠাৎ এরূপ ঢেউ তুলিতে পারে, ব্যগ্র আশার আশ্বাস দিয়াই পরমুহুর্তে নিরাশা ও দুঃখের অতল তলে নিমজিত করিয়া দিতে পারে, পনেরো টাকা বেতনের আমহাস্টর্ণ স্ট্রট পোস্টাফিসের পিওন যে একদিন তাহার দুঃখ-মুখের বিধাতা হইবে, এ কথা ܒܚܧܪܦܬܚܠܽܦ