পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কবে ভাবিয়াছিল ? পূর্বে কালে-ভদ্রে মায়ের চিঠি আসিত, তাহার জন্য এরূপ ব্যগ্র প্রতীক্ষার প্রয়োজন ছিল না। পরে মায়ের মৃত্যুর পর বৎসরখানেক তাহাকে একথানি পত্রও কেহ দেয় নাই! উঃ, কি দিনই গিয়াছে সেই এক বৎসর । মনে আছে, তখন রোজ সকালে চিঠির বাক্স বৃথা আশায় একবার করিয়া খোজ করিয়া হাসিমুখে পাশের ঘরের বন্ধুদের উদ্দেশ করিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিত-আলে, বীরেন বোসের জন্যে তো এ বাসায় আর থাকা চলে না। দেখছি ?--রেজ রোজ যত চিঠি আসে তার অর্ধেক বীরেন বোসের নামে । বন্ধু হাসিয়া বলিত-ওহে পাচজন থাকলেই চিঠিপত্তর আসে। পাচদিক থেকে। তোমার নেই কোন চুলোয় কেউ, দেবে কে চিঠি ? বোধ হয় কথাটা রূঢ় সত্য বলিয়াই অপুর মনে আঘাত লাগিত কথাটায়। বীরেন বোসের নানা ছাদের চিঠিগুলো লোলুপ দৃষ্টিতে চাহিয়া চাহিয়া দেখিত --সাদা খাম, সবুজ খাম, হলদে খাম, মেয়েলি হাতের লেখা পোস্টকার্ড, এক একবার হাতে তুলিয়া লোভ দমন করিতে না পারিয়া দেখিয়াছেও-ইতি তোমার দিদি, ঈতি তোমার মা, আপনার স্নেহের ছোট বোন সুশী, ইত্যাদি । বীরেন বোস মিথ্যা বলে নাই, চারিদিকে আত্মীয় বন্ধু থাকিলেই রোজ পত্র আসে-তােহার চিঠি তো আর আকাশ হইতে পড়িবে না ? আজকাল আর সে দিন নাই। পত্র লিখিবার লোক হইয়াছে এতদিনে । জন্মাষ্টমীব ছুটিতে বাডি যাওয়ার কথা, কিন্তু দিনগুলো মাসের মত দীর্ঘ । অবশেষে জন্মাষ্টমীর ছুটি আসিয়া গেল। এডিটারকে বলিয়া বোলা তিনটার সময় অফিস হইতে বাহির হইয়া সে স্টেশনে আসিল । পথে নব-বিবাহিত বন্ধু অনাথবাবু বৈঠকখানা বাজার হইতে আমি কিনিয়া উর্ধশ্বাসে ট্রাম ধরিতে ছুটিতেছেন । অপুব কথার উত্তরে বলিলেন-সময় নেই, তিনটে পনেরো ফেল কবলে আবার সেই চাবটে পচিশ, দু’ঘণ্টা দেরী হয়ে যাবে পৌছতে-আচ্ছা! আসি, নামঙ্গাব ! দাডিটা ঠিক কামানো হইয়াছে তো ? মুখ রৌদ্রে ধূলায় ও ঘামে যে বিবর্ণ হইয়া যাইবে তাহার কি ? কী গাধাবোট-গাডিাখানা, এতক্ষণে মোটে নৈহাটি ? বাডি পৌঁছিতে প্রায় সন্ধ্যা হইতে পারে। খুশির সহিত ভাবিল, চিঠি লিখে তো যাচ্ছি নে, হঠাৎ দেখে অপর্ণা একেবারে অবাক হয়ে যাবে এখন বাড়ি যখন পৌছিল, তখনও সন্ধ্যার কিছু দেরি। বধু বাড়ি নাই, বোধ হয় নিরুপমাদের বাড়ি কি পুকুরের ঘাটে গিয়াছে। কেহ কোথাও নাই। অপু -- Mah