পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাদ যাবে না ? এক্ষুনি ঘাটে যাও-না, আমি শুনবে না-করে দিকি কেমন কাজ করবে ? সর্বজয়ী পুত্রের দিকে চাহিয়া হাসিয়া বলিল-ও রকম দুষ্টুমি করে না, ছিঃ -এই হয়ে গ্যালো বলে, আর একটুখানি সবুর করো-ঘাটে যাবো, ছুটে এসে তোমার ভাত চড়িয়ে দোব-দুষ্টুমি করে কি ? ছাড় আঁচল, ক’খানা পলতার বড়া ভাজা খাবি বল দিকি ? ঘণ্টাখানেক পর অপু মহা উৎসাহের সহিত খাইতে বসিল। গ্লাস তুলিয়া সে ঢাক ঢক্‌ করিয়া অর্ধেকখানি খালি করিয়া ফেলিয়া, পরে আরও দু'এক গ্রাস খাইয়া কিছু ভাত পাতের নীচে ছড়াইয়া বাকী জলটুকু শেষ করিয়া হাত তুলিয়া বসিল। -কৈ খাচ্ছিস কৈ ? এতক্ষণ তো ভাত ভাত ক’রে হাপাচ্ছিলে-পলতার বডা-পলতার বডা-ঐ তো সবই ফেলে রাখলি, খেলি কি তবে ? সলজিয়া একবাটি দুধ-ভাত মাখিয়া পুত্রকে খাওয়াইতে বসিল। দেখি হঁ করু-তোমার কপালখানা-মণ্ডা না মেঠাই না, দুটো ভাত আর ভাত-তা ছেলের দশা দেখলে হয়ে আসে-রোজ ভাত খেতে বসে মুখ কাচুমাচু-বাঁচবে কি খেয়ে ? বঁাচতে কি এসেচ ? আমায় জ্বালাতে এসেচ বৈ তো নয়-ও- রকম মুখ ঘূরিও না, ছিঃ —হঁা করো লক্ষ্মী-দেখি এই দলাটা হ’লেই হোয়ে গেল। -আবােব ওবেলা টুলুদের বাড়ি মনসার ভাসান হবে। তুই জানিস নে বুঝি ? শীগগির খেয়ে নিয়ে চলো । আমরা সব দুৰ্গা বাড়ী ঢুকিল। কোথা হইতে ঘুরিয়া আসিতেছে। এক-পা ধূলা, কপালের সামনে এক-গোছা চুল সোজা হইয়া প্রায় চার আঙল উচু হইয়া আছে। সে সব সময় আপন মনে ঘুরিতেছে-পাড়ার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাহার বড় একটা খেলাধূলা নাই।-কোথায় কোন ঝোপে। বৈঁচি পাকিল, কাদের বাগানে কোন গাছটায় আমের গুটি বাধিয়াছে, কোন বঁাশতলায় শেয়াকুল খাইতে মিষ্ট-এ সব তাহার নখদপণে ? পথে চলিতে চলিতে সে সর্বদা পথের দুই পাশে সতর্ক দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে চলিয়াছে-কোথাও কঁাচপোকা বসিয়া আছে কি না ! যদি কোথাও কন্টিকারী গাছের পাকা ফল দেখিতে পাইল, তৎক্ষণাৎ খেলাঘরের বেগুন করিবার জন্য তাহা তুলিতে বসিয়া যাইবে। হয়তো পথে কোথাও বসিয়া সে নানারকমের খাপরা লইয়া ছুড়িয়া পরীক্ষা করিয়া দেখিতেছে, গঙ্গা-যমুনা খেলায় কোন থানায় ভাল তাক হয়-পরীক্ষায় যে-খানা ভাল বলিয়া প্রমাণিত হইবে, সেখানা সে সযত্নে আঁচলে বঁাধিয়া লইবে । সর্বদাই সে পুতুলের বাক্স ও খেলাঘরের সরঞ্জাম লইয়া মহাব্যস্ত। མཁས་མ་8 8)