পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপু প্রথমে আসিল কলিকাতায়। একটা খুব লম্বা পাড়ি দিবে-যেখানে সেখানে-যেদিকে দুই চোখ যায়এতদিনে সত্যই মুক্তি। আর কোনও জালে নিজেকে জড়াইবে না-সব দিক হইতে সতর্ক থাকিবে-শিকলের বঁাধন অনেক সময় অলক্ষিতে জড়ায় কিনা পায়ে । ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরীতে গিয়া সারা ভারতবর্ষের ম্যাপ ও য়্যাটলাস কয়দিন ধরিয়া দেখিয়া কাটাইল-ড্যানিয়েলের ওরিয়েণ্টাল সিনারি ও পিঙ্কাটনের ভ্রমণ-বৃত্তান্তের নানাস্থান নোট করিয়া লইল-বেঙ্গল নাগপুর ও ইস্ট ইণ্ডিয়ান রেলের নানাস্থানের ভাডা ও অন্যান্য তথ্য জিজ্ঞাসা করিয়া বেড়াইল । সত্তর টাকা হাতে আছে, ভাবনা কিসের ? কিন্তু যাওয়ার আগে একবার ছেলেকে চোখের দেখা দেখিয়া যাওয়া দরকার না ? সেই দিনই বৈকালের ট্রেনে সে শ্বশুরবাড়ি রওনা হইল। অপর্ণার মা জামাইকে এতটুকু তিরস্কার করিলেন না, এতদিন ছেলেকে না। দেখিতে আসার দরুন। একটি কথাও বলিলেন না । বরং এত আদর-যত্ন করিলেন যে অপু নিজেতে অপরাধী ভাবিয়া সঙ্কুচিত হইয়া রহিল। অপু বাডির লোকজনের সঙ্গে কথা কহিতেছে, এমন সময়ে তাহার খুড়শাশুড়ী একটি সুন্দর খোকাকে কোলে করিয়া সেখানে আসিলেন। অপু ভাবিল-বেশ খোকাটি তো ? কাদের ? খুড়শাশুড়ী বলিলেন-যাও তো খোকন, এবাব তোমার আপনার লোকের কাছে। ধন্যি যাহোক, এমন নিষ্ঠুর বাপ কখনও দেখি নি ! যাও তো একবার কোলে- 零 ছেলে তিন বৎসর প্রায় ছাড়াইয়াছে-ফুটফুটে সুন্দর গায়ের রং-অপর্ণার মত ঠোঁট ও মুখের নীচেকার ভঙ্গী, চোখ বাপের মত ডাগর ডাগর। কিন্তু সবসুদ্ধ ধরিলে অপর্ণার মুখের আদলই বেশী ফুটিয়া উঠে খোকার মুখে। প্রথমে সে কিছুতেই বাবার কাছে আসিবে না, অপরিচিত মুখ দেখিয়া ভয়ে দিদিমাকে জডাইয়া রহিল—অপুর মনে ইহাতে আঘাত লাগিল। সে হাসিমুখে হাত বাডাইয়া বার বার খোকাকে কোলে আনিতে গেল-ভয়ে শেষকালে খোকা দিদিমার কাধে মুখ লুকাইয়া রহিল। সন্ধ্যার সময় খানিকটা ভাব হইল। তাহাকে দু-একবার ‘বাবা’ বলিয়া ডাকিলাও । একবার কি একটা পাখি দেখিয়া বলিল-ফাখি, ফাখি, উই এত্ত ফাখি নেবো বাবা “পা”কে কচি জিব ও ঠোঁটের কি কৌশলে ‘ফ’ বলিয়া উচ্চারণ করে, কেমন অদ্ভুত বলিয়া মনে হয়। আর এত কথাও বলে খোকা । কিন্তু বেশীর ভাগই বোঝা যায় না-উলটো পালটা কথা, কোন কথার