পাতা:অপু-পথের পাঁচালী-অপরাজিত.pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈকৃালে বুদ্ধগয়া দেখিতে গেল। অপুর যদি কাহারও উপর শ্রদ্ধা থাকে তবে তাহার। আবাল্য শ্রদ্ধা এই সত্যভ্রষ্টা মহাসন্ন্যাসীর উপর। ছেলের নাম তাই সে রাখিয়াছে অমিতাভ । বামে ক্ষীণস্রোতা ফন্তু কটা রংয়ের বালুশষ্যায় ক্লান্তদেহ এলাইয়া দিয়াছে, ওপারে হাজারিবাগ জেলার সীমান্তবর্তী পাহাডশ্রেণী, সারাপথে ভারী সুন্দর ছায়া, গাছপালা, পাখির ডাক, ঠিক যেন বাংলাদেশ। সোজা বঁধানে রাস্তাটি ফন্ধর ধারে ধারে ডালপালার ছায়ায় ছায়ায় চলিয়াছে, সারাপথ অপু স্বপ্নাভিভূতের মত এক্কার উপর বসিয়া রহিল। একজন হলফ্যাশানের কাপড পর তরুণী মহিলা ও সম্ভবত র্তাহার স্বামী মোটরে বুদ্ধগয়া হইতে ফিরিতেছেন, অপু ভাবিল হাজার হাজার বছর পরেও এ কোন নৃতন যুগের ছেলেমেয়েপ্রাচীনকালের সেই পীঠস্থানটি এমন সাগ্রহে দেখিতে আসিয়াছিল ? মনে পডে সেই অপূর্ব রাত্রি, নবজাত শিশুর চাদমুখ-ছন্দকা-গায়ার জঙ্গলে দিনের পর দিন সে কি কঠোর তপস্যা । কিন্তু এ মোটর গাডি ? শতাব্দির ঘন অরণ্য পার হইয়া এমন একদিন নামিয়াছে পৃথিবীতে পুরাতনের সবই চূর্ণ করিয়া উন্টাইয়া-পাণ্টাইয়া নবযুগেব পিত্তন করিয়াছে। রাজা শুদ্ধোধনের কপিলাবস্তু মহাকালের স্রোতের মুখে ফেনার ফুলের মত কোথায় ভাসিয়া গিয়াছে, কোন চিহ্নও রাখিয়া যায় নাই-কিন্তু ঊর্তাহার দিগ্বিজয়ী পুত্র দিকে দিকে সে বৃহত্তর কপিলাবস্তুর অদৃশ্য সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করিয়া গিয়াছেন—ৰ্তাহার প্রভৃত্বের নিকট এই আডাই হাজার বৎসর পরেও কে না মাথা নত করিবে ? গয়া হইতে পরদিন সে দিল্লী এক্সপ্রেসে চাপিল-একেবারে দিল্লীর টিকিট কাটিয়া। পাশের বেঞ্চিতেই একজন বাঙালী ভদ্রলোক ও র্তাহার স্ত্রী ৰাইতেছিলেন। কথায় কথায় ভদ্রলোকটির সঙ্গে আলাপ হইয়া গেল। গাডিতে আর কোন বাঙালী নাই, কথাবার্তার সঙ্গী পাইয়া তিনি খুব খুশী। অপুর কিন্তু বেশী কথাবার্তা ভাল লাগিতেছিল না। এর এ-সময় এত বক-বক করে কেন ? মারোয়াড়ী দুটি তো সাসারাম হইতে নিজের মধ্যে বকুনি শুরু করিয়াছে, মুখের उधांद्ध विद्धांभ नांझे । খুশীভরী, উৎসুক, ব্যগ্র মনে সে প্রত্যেক পাথরের মুড়িটি, গাছপালাটি লক্ষ্য করিয়া চলিয়াছিল। বামদিকের পাহাড়শ্রেণীর পিছনে সূর্য অন্ত গেল, সারাদিন আকাশটা লাল হইয়া আছে, আনন্দের আবেগে সে দ্রুতগামী গাড়ির দরজা খুলিয়া দরজার হাতল ধরিয়া দাড়াইতেই ভদ্রলোকটি বলিয়া উঠিলেন, উহু, পড়ে যাবেন, পাদানিতে শ্লিপ করলেই-বন্ধ করুন মশাই। অপু হাসিয়া বলিল, বেশ লাগে। কিন্তু, মনে হয় যেন উড়ে যাচ্ছি। RSR